হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ‍্যবাহী হুঁকো

রতি কান্ত রায়,কুড়িগ্রাম
হুঁকো হচ্ছে তামাক খাওয়ার এক রকম যন্ত্র। এক সময়ের হুঁক্কা এখন শুধুই সৃস্নি। কুড়িগ্রাম জেলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ‍্যবাহী হুঁকো।

ধুমপানের প্রাচীনতম মাধ‍্যমটি আজ প্রায় নেই বললেই চলে।আগে সহজলভ ধুমপানের মাধ‍্যম ছিল এই হুঁকো। বাংলার পাড়াগাঁয়ে দেড় দু’ দশক আগেও হুঁকোর প্রচলন ছিল।

কোনও কোনও গ্রামে আজও সে রেওয়াজ চোখে পড়ে। কিন্তু শহরাঞ্চলের বৈঠকখানা থেকে হুঁকো বিদায় নিয়েছিল অন্তত আধশতক আগেই।

বাংলাদেশের গ্রামঞ্চলে জ‍্যাঠামশইরা,দাদামশইরা শুধু নন, কৃষকরা ও শ্রমিকরা গ্রামবাংলার উঠানে বা প্রত‍্যেকের বাড়িতে সকাল বেলা কাজে বের হওয়ার পৃর্বে বা দুপুর বেলা হ্মেতে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে নতুবা বিকেল থেকে সন্ধ‍্যায় আয়েশী ভঙ্গিতে এক ছিলিম তামাক সাজিয়ে পরম আনন্দে হুঁকো টানতো।

এর ফলে কৃষকের ক্লান্তি বা শ্রমিকের সান্ত্বনা দুটোই হুঁকোর সুখটানের মাধ‍্যমেই পরিতৃপ্ত হতো। হুঁকো তৈরি করা হত নারকেলের মালাই ও কাঠের নৈছা দিয়ে আর নারকের মালাইয়ে জল ভর্তি করা হত( যা ওয়াটার ফিল্টার হিসাবে কাজ করতো)। মাটির সিলিম কিনে আনতো কুমারের কাছ থেকে।

বাজার থেকে তামাক পাতা কিনে এনে ছোট ছোট করে কেটে তার সঙ্গে গুড় মিশিয়ে হাত দিয়ে মলিয়ে তৈরি করতো হুঁকোর উপকরণ।

তামাক পান করার জন‍্য খরের ভুতি অথবা মাটির কাসায় কাঠের গুড়া বা ধানের গুড়ায় আগুন সংরক্ষণ করে রাখতো হুঁকো সাজার জন‍্য।

সাধারণত হুঁকোর মাটির সিলিমে গুড়ুক তামাক ব‍্যবহার করতো হুঁকো পানকারিরা। প্রত‍্যেকদিন হুঁকোর জল পাল্ঠানো হতো।

এক সময় হুঁকোর প্রচলন ছিল সর্বত্র। রাজা-বাদশা, শ্রমিক থেকে জমিদার বাড়ি পর্যন্ত। বাহারি ধরনের হুঁকো তৈরি করা হতো নারিকেলের মালাই দিয়ে এবং তার সঙ্গে খুব সাবধানে লাগানো হতো কারুকার্য করা কাঠের নল ও নলের ওপর মাটির সিলিম বসিয়ে সাজানো হতো তামাক। নারী-পুরুষ নির্বশেষে সকলেই হুঁকা পান করতো।

গৃহস্থ বাড়ির নাকারী,মহাজন-জমিদার বাড়ির কাচারি ও রাজা-বাদশার রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত সব জায়গায় ছিল হুঁকোর কদর। পালাবদল করে হুঁকো পানের আমেজে মেঠে উঠত সবাই । স্বচ্ছল ও জমিদার বাড়ির পরিবারগুলোতে আভিজাত্যের প্রতীক ছিল এই হুঁকো।

সেসব হুঁকোয় থাকতো লম্বা পাইপ আর সেই লম্বা পাইপের মাথায় মাটির সিলিম বসিয়ে তামাক সাজানো হতো। নলটি মুখে দিয়ে আয়েশ করে হুঁকোয় সুখটান দিত জমিদাররা।

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা গ্রামের বাসিন্দা শ্রী সরবানন্দ বর্মনের সাথে। তিনি জানান, প্রায় ৫০ বছর হলো হুঁকা পান করা ছেড়ে দিয়েছেন। হুঁকা ছাড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এখন আর তামাক পাওয়া যায় না আর খরচও বেশী পড়ে এবং আগে ৫-৬টাকার তামাক কিনলে অনায়াসে ৫-৬ দিন চলে যেত।

সে সময় তামাক পান-সুপাড়িওয়ালারা বিক্রি করতো কিন্তু এখন ত্রুেতা না থাকায় তামাক বিক্রি ছেড়ে দিয়েছেন তারা।

তিনি আরও বলেন হুঁকোর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। হুঁকো পান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। হুঁকো পান করলে শ্বাসকষ্ঠ হয়।

হুঁকো পান করলে তামাকের কাইটা নারকেলের মালাইয়ের জলের মধ্যে থেকে যায়। যেসব গবাদিপশু জল কম খায় সেক্ষতে হুঁকোর জল নাকে দিলে জল পানে রুচি বাড়ে বা হুঁকোর জল গরুর কৃমিনাশক ঔষধ হিসাবে ব‍্যবহার করা হয় ও হুঁকোর কাই কবিরাজরা ঔষধ তৈরিতে ব‍্যবহার করতো।

বর্তমানে হুঁকোর কদর নেই, হুঁকোর স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক বিড়ি- সিগারেট ও প্রত‍্যন্তঞ্চলে তামাক দিয়ে তৈরি একধরনের নেশা (গুল)।

এপ্রজম্মনের অনেকেই জানে না হুঁকো কি জিনিস। আধুনিকতায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী হুঁকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *