বিশেষ সংবাদদাতা–
দেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪.৬ ভাগ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। যে কোনো বয়সে এমনকি শিশুদের মাঝেও এ সমস্যা দেখে দিতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৩০-৪০ বছর বয়সে বিষণ্নতার লক্ষণ প্রথম দেখা যায়। এছাড়া ১৫-১৮ বছর ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মাঝে এর ঝুঁকি বেশি।
৭ এপ্রিল ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ উপলক্ষে বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ তথ্য জানান।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বিষণ্নতার বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে। এ জন্য ধৈর্য্য সহকারে মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। এক্ষেত্রে ওষুধ ও সাইকো থেরাপি দু’ই প্রয়োজন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী রোগ, দারিদ্র, বেকারত্ব, একাকিত্ব, পারিবারিক ও সম্পর্কের সমস্যা, গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়, বিবাহ বিচ্ছেদ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, প্রবাস জীবন, অভিবাসন, মাদকসেবন ইত্যাদি কারণেও এটি হতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নত ও সহজলভ্য সেবা প্রদান নিশ্চিতের লক্ষ্যে দেশে একটি কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের স্বাস্থ্যখাতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- মাতৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধির বিস্তার, সার্বিক প্রজনন হার ও অনাকাঙ্খিত প্রজনন হার হ্রাসকরণ এবং মহিলা ও পুরুষের গড় আয়ু, প্রথম সন্তান জন্মের সময় মায়ের বয়স, পুষ্টির মান ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিকরণ। এ সকল উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্যখাতে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে মোহাম্মদ নাসিম জানান, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে।
এছাড়া উন্নত ও বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির জন্য ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২য় ইউনিট, ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসাইন্স, ঢাকার তেজগাঁওয়ে নাক-কান-গলা বিশেষায়িত হাসপাতাল, গোপালগঞ্জে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ ও চালু করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নামে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বার্ন (ম্যানেজমেন্ট) ও প্লাস্টিক সার্জাসি’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার নামে চালুকৃত হাসপাতালে স্থানীয় এবং দূরবর্তী রোগীদের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে বহুমুখী স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন নতুন হাসপাতাল নির্মাণের পাশপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সরকারের ২০০৯-১৬ মেয়াদে ২০১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে ৩০১টি অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়েছে। সরকার ৬ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে গ্রামে পদায়ন করেছে। ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়ন করেছে। সারাদেশে মডেল ফার্মেসি চালু করা হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ৩ উপজেলায় অতি দরিদ্রদের জন্য ৫০ রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে দেয়ার লক্ষ্যে চালু হয়েছে ‘শেখ হাসিনা হেলথ কার্ড’। যা সারাদেশে বিস্তৃত করা হবে।
প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৪.৬ ভাগ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত
