পানছড়িতে ভেস্তে যাচ্ছে এলজিইডির ১কোটি ৬২ লাখ টাকার তীর রক্ষা প্রকল্প!

মরে যাচ্ছে ঘাস, তীরে ধরেছে ফাটল

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
জেলার পানছড়িতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকার চেঙ্গী নদীর তীর রক্ষার প্রকল্পের উন্নয়ন ভেস্তে যাচ্ছে। এতে সরকারি টাকা গচ্ছা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীর তীর রক্ষায় বিন্না ঘাস রোপণ করলেও অধিকাংশই মরে যাচ্ছে। ঘাস রক্ষায় ঠিকাদারের নিয়মিত পানি দেওয়ার কথা থাকলেও কার্যতঃ তা হয়নি।

সরজমিনে দেখা যায় , স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০২০-২১ অর্থবছরে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ সেক্টর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চেঙ্গী নদীর উপর ৮০ মিটার ড্যাম প্রকল্পে মেরামত করণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের ব্যয় বাবদ ১ কোটি ৬২ লাখ ৬০ হাজার ৯শ ৮৮ টাকা দরা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সেচনালা নির্মাণ ও নদীর তীর রক্ষায় বিন্না ঘাস লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।

প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মেসার্স রীপ এন্টারপ্রাইজ মনোনীত হলেও উপ-ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন স্থানীয় লাইসেন্স বিহীন ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব। তিনি রাবার ড্যাম সংলগ্ন নদীর তীর রক্ষায় প্রায় ৪শ মিটার এলাকায় বিন্না ঘাস রোপণ করেন। কক্সবাজার থেকে আনা এসব ঘাস নদীর দুই তীরে রোপণ করা হয়। রোপণের পর ঠিকাদারের অনিয়মিত সেচের কারণে বেশির ভাগ ঘাস মরে গেছে। বিন্না ঘাস পাহাড় ধস ও নদীর তীর রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয় বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ‘ঘাস লাগিয়ে নদীর তীর রক্ষা করা যাবে না। ইতিমধ্যে অনেক ঘাস মরে গেছে। নদী রক্ষায় ঘাস লাগানো হলেও ঠিকমতো পরিচর্যা না করায় তা মরে যাচ্ছে।

চেঙ্গী নদীর ড্যাম সংলগ্ন পাড়ার বাসিন্দা প্রীতিরঞ্জন চাকমা জানান, ‘আমি রাবার ড্যাম সংলগ্ন নদীর তীর রক্ষা করার জন্য আবেদন করেছি। আবেদনে নদীর তীর ভাঙন রোধ করার জন্য বøক বানিয়ে দিতে বলেছি। অথচ উপজেলা প্রকৌশলী বলেছেন ঘাস দিয়ে নদীর তীর রক্ষা করা সম্ভব। তা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে ব্লক দেওয়া হবে। নদীর তীরে ঘাস লাগানো হয়েছে শীতকালে। ঠিকমতো পানি সেচ দেওয়া হয় নাই। অধিকাংশ ঘাস মরে গেছে। এছাড়াও নদীর তীরে ফাটল সৃস্টি হয়েছে। সরকারের উন্নয়নের কোটি টাকা শেষ হবে তবে এই প্রকল্প কোনো কাজে আসবে না।

সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা পানছড়ি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস বলেন, তীরের মাটি কোথায় ডেবেছে তা জানা নাই। এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। আমরা ঠিকাদারের বিলও পরিশোধ করি নাই। ইতিমধ্যে মরা ঘাস রক্ষায় ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছি। মরা ঘাস জীবন্ত করে না দিলে ঠিকাদারের বিল দেয়া হবে না। নদীর তীর রক্ষায় আপাতত কম টাকায়’ বিন্না ঘাস দিয়ে নদীর তীরের মাটি বসানোর কাজ করানো হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা বলেন, রাবার ড্যামের কারনে আমার পৈত্রিক ভিটা নদীতে চলে গেছে। ঘাস দিয়ে পাহাড়ী নদীর তীর রক্ষা করা সম্ভব না। এছাড়াও সার্বিক তত্তাবধানে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-র প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের ঘাফেলতিতে বেশির ভাগ ঘাস মরে গেছে। ঘাস লাগানোর জন্য যতটুকু নদীর পাড় কেটে ঢালু করা হয়েছে, এবার বর্ষায় ততটুকুও পানিতে ভেসে যাবে। সরকারের উন্নয়নের কোটি টাকা খরচ হলেও নদী রক্ষায় সংকায় আছেন স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *