তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের জবাবে নৃশংসভাবে চাচাতো বোনকে খুন | বাংলারদর্পণ

ফেনী’ প্রতিনিধি:
তানিশা হত্যাকান্ডের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানাতে আজ সকালে সংবাদ সম্মেলন করেন ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী। তিনি বলেন,ছোট বেলায় বাবা মারা যান। চাচা-জেঠা আর ফুফু সহ আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় চলছিল নিশানের সংসার। প্রতিনিয়ত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য থেকে ক্ষোভ জম্মাতে থাকে। এর শোধ নিতেই চাচাতো বোন তানিশাকে খুন করা হয়। হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে শুক্রবার(০৭ মে) বিকালে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহমদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে গ্রেফতার হওয়া আক্তার হোসেন নিশান।

তদন্তকারী একটি সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে নিশান জানায়- তার বাবা জীবিত না থাকায় ও তারা দরিদ্র হওয়ায় চাচার পরিবার নিয়মিত তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো। একটু সুযোগ পেলেই কটু কথা বা গালমন্দ করা হতো। এনিয়ে দীর্ঘদিন থেকে তার মনে ক্ষোভ জমে ছিল।

তানিশার ভাই মসজিদে ‘ইতেকাফে’ থাকায় বৃহস্পতিবার রাতে তাকে মসজিদে ভাত পৌঁছে দিতে বলে। সে ভাত নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে পথে অন্য একজনকে ওই ভাত পৌঁছে দিতে বলে-আবার বাড়ী ফিরে যায়। তখন ঘরে ছিল তানিশা ও তার দাদী।

এ সুযোগে তাদের ঘরে ঢুকে ড্রয়িং কক্ষেই তানিশার হাত ও মুখ বেধে ফেলে। টানা-হেঁছড়া করে তাকে ছাদের সিঁড়ি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে একপর্যায়ে তানিশা হাত খুলে ফেলে। আবার হাত-মুখ বেঁধে তাদের রান্না ঘর থেকে ছোরা নিয়ে গলায় কোপানো হয়। পরে ছাদের এক পাশে একটি গাছ বেয়ে নীচে নেমে নিজের ঘরে চলে যায়। কিন্তু সিঁড়িতে তার সেন্ডেল ফেলে যাওয়ার কথা তখন ভুলে যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ইমরান হোসেন জানান, নিহতের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও রশি প্যাঁচানো ছিলো। ছাদে মৃতদেহের পাশেই পড়ে ছিল নিশানের জুতা। বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত একটি ছোরাও উদ্ধার করা হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নানা তথ্য প্রকাশ করে। সেসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালতের আদেশে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এদিকে হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ধর্ষণ হয়েছে কিনা সেটি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা নিশ্চিত না হলেও ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া গেছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত,ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের মাইজবাড়িয়া গ্রামের স্কুলছাত্রী তানিশা ইসলাম তিশাকে (১১) নিজ বাড়ীর ছাদে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে তার চাচাতো ভাই আক্তার হোসেন নিশান (১৭)। নিহত তানিসা ওই বাড়ীর প্রবাসী শ‌হিদুল ইসলামের মেয়ে।

সে শহ‌রের ডাক্তারপাড়া ম‌হিউচ্ছুন্নাহ মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।‌তিন ভাই বো‌নের ম‌ধ্যে সবার ছোট ছিল তানিসা। আগেরদিন ৫মে ছিল তার জন্মদিন।নিশান ওই বাড়ীর মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *