ভারতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন

প্রতিবেদকঃ
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে করোনা। গত তিনদিনে ১০ লাখের বেশি মানুষের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে এশিয়ার দেশটিতে এই সময়ের মধ্যে অন্তত সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। মারা যাচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ।

হাসপাতালের বাইরে লাশের সারি। শ্মশানে রাতদিন জ্বলছে চিতা। দাফনের জায়গার সংকুলান হচ্ছে না কবরস্থানেও।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার দেশজুড়ে ৩ লাখ ৪৯ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয় এবং এদিন করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৭৬০ জনের।

এর মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ দিন ভারতে তিন লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলো আর মৃত্যুসংখ্যা দুই হাজারের বেশি।

দেশটির রাজধানী দিল্লির অবস্থাও ভয়াবহ। প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় দিল্লিতে মৃত্যু হয়েছে ৩৫৭ জনের।

আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪১০৩ জন। এ নিয়ে ১০ দিনে দিল্লিতে ১ হাজার ৭৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সেখানে বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ৯৩ হাজার ৮০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির।

ভারতের এই ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে যুক্তরাষ্ট্র ভারত সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ভারতকে সব ধরনের সাহায্যের চেষ্টা করছেন তারা। এক বিবৃতিতে ব্লিংকেন বলেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভারতের ভয়ংকর পরিস্থিতি দেখে আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত।

আমাদের সহযোগী দেশ ভারতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আমরা যোগাযোগ রেখেছি। আমরা খুব দ্রুত ভারত এবং ভারতের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছি।

ভারতের করোনা সংক্রমণ দেখে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানোম গেব্রিয়াসুস। ডব্লিউএইচও প্রধান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে ফের করোনা সংক্রমণে তিনি উদ্বিগ্ন।

ভারতের এই পরিস্থিতিই বিধ্বংসী অনুস্মারক বা পূর্বাভাস দিচ্ছে যে ভাইরাস কী করতে পারে। অর্থাৎ ভারতে ক্রমাগত যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ, তা রীতিমতো ভয়ানক আকার নিতে চলেছে বলেই মন্তব্য করেন ডব্লিউএইচও প্রধান।

এর পাশাপাশি তিনি শুক্রবার বলেন, বিশ্বে ক্রমাগত করোনার বাড়বাড়ন্ত শুধু টিকার অভাবের কারণেই। ভ্যাকসিনেশন পর্যাপ্ত পরিমাণে হচ্ছে না, টেস্টিং হচ্ছে না, হচ্ছে না চিকিৎসাও।

ভারতে করোনা টেস্টের পরিমাণ অনেকাংশে বাড়লেও পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থার এখন পর্যন্ত অনেকটাই অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে টিকারও।

সেক্ষেত্রে ডব্লিউএইচওপ্রধানের এই সতর্কবার্তা অনেকটাই প্রাসঙ্গিক। টিকাকরণের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি না হলে পরবর্তী সময় যে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে চলেছে, ভারতের পরিস্থিতি তা ডব্লিউএইচওপ্রধানের বক্তব্যেই স্পষ্ট।

বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যু। সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত হয়েছেন ১৪ কোটি সাড়ে ৭১ লাখেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩১ লাখ ১৫ হাজার কোভিড রোগী। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন মোট ১২ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ১৪১ জন। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৯ জন।

একই সময়ে মারা গেছেন ১১ হাজার ১৩৮ জন রোগী। আর সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৬৭ জন। বিশ্বে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সবার উপরে এখনো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮০ জনের।

ভারতের পরই তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ কোটি ৪৩ লাখ ৮ হাজার ২১৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৯২ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ২৭ লাখ ১১ হাজার ১০৩ জন।

এছাড়া শনাক্তের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ফ্রান্স, পঞ্চম স্থানে রাশিয়া, ষষ্ঠ স্থানে তুরস্ক, সপ্তম স্থানে যুক্তরাজ্য, অষ্টম স্থানে ইতালি, নবম স্থানে স্পেন এবং দশম স্থানে রয়েছে জার্মানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *