সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে রাতারাতি যারা পৌঁছে গেছেন খ্যাতির চূড়ায়

জানা-অজানা ডেস্কঃ ইন্টারনেটের এই যুগে সামাজিক যোগাযোগের কারণে কত অজানা, সাধারণ পেশার মানুষ রাতারাতি পৌঁছে গেছেন খ্যাতির চূড়ায়। এক সময় ছিলেন সাধারণ, পরে হয়ে উঠেছেন জনপ্রিয়; এমনই কয়েকজন ব্যক্তির গল্প শুনলে মন্দ হয় না!

কুসুম শ্রেষ্ঠ (নেপাল)

 

এই তরুণী সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কল্পনা-জল্পনার অন্ত নেই। সর্বত্র তার পরিচয় একটাই। সবজিওয়ালি। টুইটার ব্যবহারকারীরা মেয়েটির রূপের এবং সরলতার প্রশংসা করে তার ছবি ভাইরাল করলেও তার নামটি জানা ছিল না কারো। কিছু দিন আগে নেপালের গোর্খা এবং চিতওয়ানের পার্শ্ববর্তী এলাকায় তার কয়েকটি ছবি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী রূপচন্দ্র মহাজন। যেগুলো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পোস্ট করার পরেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল মুহূর্তের মধ্যে। পরপর দু’টি ছবি পোস্ট করেছিলেন রূপচন্দ্র। একটিতে সেই তরুণী টমেটো ভর্তি বাক্স পিঠে নিয়ে সেতু পার হচ্ছেন। অন্যটিতে তিনি সবজির বাজারে ফোনালাপে ব্যস্ত। এলোমেলো চুল, সবুজ সালোয়ার কামিজ পরিহিতা ঐ তরুণী মুহূর্তে হয়ে উঠেছে যুবকদের নয়নের মণি। অবশেষে জানা যায় তার নাম, কুসুম শ্রেষ্ঠা, বয়স ১৮। কাঠমুণ্ডু থেকে প্রায় ৫৫ মাইল দূরে, গোর্খা এলাকার শহর বাগলিংয়ে থাকে কুসুমের পরিবার। চিতওয়ান জেলার একটি কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি ছুটির দিনে পরিবারকে সাহায্যের জন্য সবজি বিক্রির কাজ করেন তিনি।ইন্টারনেটে এভাবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় রীতিমতো অবাক হন কুসুম শ্রেষ্ঠা। মডেলিংয়ের প্রস্তাব পান। বর্তমানে কুসুম পড়াশোনার পাশাপাশি চুটিয়ে মডেলিং করছেন।

 

মিখাইল ভারসাভস্কি (আমেরিকা)

 

 

পেশায় চিকিৎসক। রোগী ও সহকর্মীদের কাছে হ্যান্ডসাম ডক্টর! নিউইয়র্কের চিকিৎসক মহলে মিখাইল ভারসাভস্কি নামেই পরিচিত সুদর্শন এই যুবক। অনেকে আবার ডাকেন ‘মাইক’ বলে। পেশায় চিকিৎসক হলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা কোনো সেলিব্রিটির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে তার নিজস্ব ভেরিফায়েড পেজ তো রয়েছেই, সম্প্রতি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলও খুলেছেন এই চিকিৎসক। তাতে প্রতিনিয়ত নানারকম ভিডিও আপলোডও করছেন। হিটের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। তার এই জনপ্রিয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাইক রসিকতা করে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘নিউইয়র্কের অনেক মহিলাই নাকি তাদের পরিবারের লোকদের বলে রাখেন, অসুস্থ হলে তাদের যেন ডক্টর মাইকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ এতেই বোঝা যায় তার জনপ্রিয়তার বহর। চিকিৎকের পেশা সামলিয়ে এখন মডেলিংও করছেন তিনি।

 

ওমর বোরকান আল গালা (সৌদি আরব)ওমর বোরকান আল গালা

পরিচিত সকলেই বলে তিনি নাকি বড্ড বেশি সুদর্শন! অতিরিক্ত সুন্দর আর হ্যান্ডসাম হওয়ার অপরাধে সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ওমর বোরকান আল গালা নামের এই যুবক। জন্ম তার দুবাইয়ে। মডেলিংয়ের পাশাপাশি লেখালেখি করতেন ওমর। উর্দু কবি হিসেবে বেশ নামও করেছিলেন। স্বপ্ন দেখতেন মডেলিং এবং চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন।

এই সময়ে একটি ঘটনা ঘটে। ২০১৩ সালে সৌদি আরবের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দুই বন্ধুর সাথে উপস্থিত হয়েছিলেন ওমর। সেখানেই বাঁধে ঝামেলা! উৎসবের আয়োজক কমিটি ওমর এবং তার বন্ধুদের উৎসব প্রাঙ্গণ ছাড়তে বাধ্য করে। আয়োজকরা যুক্তি দেখায়, তিনি ‘বড্ড বেশি’ সুপুরুষ। এই ‘বিপদজনক হ্যান্ডসাম’ ব্যক্তি নারীদের জন্য হুমকিস্বরূপ। দুবাইয়ে তার রাস্তায় বের হওয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কারণ? তিনি প্রকাশ্যে এলে নাকি নারী গাড়ি-চালকের নজর রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। আরো শোনা যায়, তার নাকি নারী ভক্তের সংখ্যা অগণিত, যারা সবসময় তাকে ভালোবাসেন এবং বিয়ের স্বপ্ন দেখে থাকেন। সম্প্রতি বোরকান বেশ কজন নারীকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এই বিষয়টি সৌদি সরকারকে আরও দুঃশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। তাই বাধ্য হয়েই তাকে দেশান্তর করা হয় বলে সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি।

স্বদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে কানাডায় আবাস গড়েছেন ওমর। সেখানেই তিনি নিজের পছন্দের পেশা মডেলিং ও অভিনয় চালিয়ে যেতে চান। আর এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় এক চরিত্র হয়ে উঠেছেন ওমর বোরকান আল গালা।

আরশাদ খান (পাকিস্তান)আরশাদ খান

আরশাদ খান পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের সুদর্শন এক চা-ওয়ালা। তার সুন্দর চেহারা আর নীল চোখের কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছিল ঝড়। চায়ের দোকানের এই কর্মীর খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছতে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। অক্টোবর মাসের এক ভোরবেলায় সকালে উদিত সূর্যের আলোয় ছবি তুলতে ইসলামাবাদের রাস্তায় বেরিয়েছিলেন জাভেরিয়া আলি নামের এক আলোকচিত্রী। অবিন্যস্ত চুল, নীল কুর্তা পরা ‘চা-ওয়ালা’ আরশাদকে নজরে পড়তে সময় লাগেনি জাভেরিয়ার। ক্যামেরার লেন্সে লুক দিয়ে যা একখানা পোজ দিয়েছিলেন তিনি, তাতেই একেবারে কাত দেশ-বিদেশের শত-সহস্র নারী! চা-ওয়ালা চা বানাতে বানাতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন- এই রকম একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। আর ভাইরাল হওয়ার মাত্র দু’দিনের মাথায় প্রথম মডেলিং অ্যাসাইনমেন্ট পান আরশাদ। একটি পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের মডেল হিসেবে আরশাদ খানের সঙ্গে চুক্তি করে। অক্টোবরে শুরু হয় তার মডেলিংয়ে কেরিয়ার। কয়েক মাসেই হয়ে উঠেন পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় মডেল।আরশাদ খান02

একাধিক সিনেমার প্রস্তাবও রয়েছে আরশাদের ঝুলিতে। আপাতত অভিনয় শিখছেন তিনি। ১৮ বছর বয়সী আরশাদ খানকে নিয়ে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় মাতামাতি এখনও চলছে। শুধু পাকিস্তানেই নয়, এমনকী বৈরী প্রতিবেশী ভারতেও তাকে নিয়ে মাতামাতি একটু অবাক করা ব্যাপারই বটে। তার ছবি নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ারের সাথে সাথে মজার মজার কমেন্ট করে থাকেন ভারত এবং পাকিস্তানের হাজারো নারী। যেমন: ‘আরশাদই পারেন ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা কমাতে’, ‘পাকিস্তানের চা-ওয়ালা- অ্যা সার্জিকাল স্ট্রাইক ফ্রম পাকিস্তান’ ইত্যাদি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *