‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও অবদান’

এ্যাড. টি.এম জানে আলম :

‘ফেব্রুয়ারি’ ভাষার মাসের শুরুতেই স্বরন করছি বাঙালী জাতির মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি ‘সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী সোসাইটি’র পক্ষথেকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

 

ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদান রয়েছে। আজন্ম মাতৃভাষা প্রেমী বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন সক্রিয়।

 

 

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের একচ্ছত্র অধিপতি হলেন। এ সময় নবগঠিত দুটি প্রদেশের মধ্যে পূর্ব বাংলার প্রতি তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ভাষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করলে বাঙালিরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। শুরু হয় ভাষা আন্দোলন।

 

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোটেলে পূর্ব পাকিস্তানের পরবর্তী কর্তব্য নির্ধারণে সমবেত হয়েছিলেন কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী। সেখানে পাকিস্তানে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগঠন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরাসরি ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। ভাষা আন্দোলনের শুরুতে তমদ্দুন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে বাংলা ভাষার দাবির সপক্ষে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন মিটিং মিছিল হয়।

 

 

১৯৪৭ সালের ৫ ডিসেম্বর খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনে মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে চলাকালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে অনুষ্ঠিত মিছিলে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং নেতৃত্বদান করে।

 

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধুকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কারাগারে থাকতে হয়েছিল। এসময় বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকলেও সেখানে বসেই তিনি ভাষা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতেন।

 

বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল যেমন- তাজউদ্দিন আহমদ, আতাউর রহমান খান, মোহাম্মদ তোয়াহা, নঈমুদ্দিন আহমদ, শওকত আলী, আবদুল মতিন, শামসুল হক, অলি আহাদ, আব্দুস সামাদ আজাদ, জিল্লুর রহমান, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, আব্দুল মমিন- তারা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, বঙ্গবন্ধু জেলখানা থেকে এবং পরে হাসপাতালে থাকাকালীন আন্দোলন সম্পর্কে চিরকুটের মাধ্যমে নির্দেশ পাঠাতেন।

 

 

ভাষা সংগ্রামী, প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘একুশকে নিয়ে কিছু স্মৃতি, কিছু কথা’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ ফরিদপুর জেলে যাওয়ার আগে ও পরে ছাত্রলীগের একাধিক নেতার কাছে চিরকুট পাঠিয়েছেন।’ শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে ১৯৪৯ সালে দুবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের পর জেল থেকে ছাড়া পান।

‘ জয় বাংলা .. জয় বঙ্গবন্ধু ‘

লেখক : সভাপতি –সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী সোসাইটি যুক্তরাজ্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *