বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা করে ভাতা উত্তোলন : ছেলের বিরুদ্ধে বৃদ্ধা মাসহ পরিবারের মানববন্ধন

কুমিল্লা সংবাদদাতাঃ
৯০ বছরের বৃদ্ধা আম্বিয়া খাতুন। বয়সের ভারে নুব্জে পড়ছেন। একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের আবেদন করেন। আবেদনটি যাচাই বাছাই করতে গিয়ে দেখা যায় আম্বিয়া খাতুনের স্বামীর নামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন নিয়মিত।

কিন্তু তিনি ভাতার বিষয়টি জানতেন না। স্বামী আবদুল কাদের ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। কখনও মুক্তিযুদ্ধাও ছিলেন না। তবে প্রতিমাসেই মুক্তিযুদ্ধা পরিচয়ে টাকা উত্তোলন হচ্ছে সেটাও জানতেন না আম্বিয়া খাতুন।

এমন একটি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে ভাতা উত্তোলনের ঘটনা ঘটে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের প্রেমু গ্রামে।
অভিযোগ উঠেছে বৃদ্ধা আম্বিয়া খাতুনের ছেলে মো. শাহীন এই জালিয়াতি করেছে। ১৯৯৬ সালের ২৮ আগস্ট মারা যাওয়া মৃত বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে মাকে না জানিয়ে শাহীন নিয়মিত ভাতা উত্তোলন করছেন। সোমবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের প্রেমু সুপার মার্কেটের সামনে শাহীদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন মা আম্বিয়া খাতুন ও দুই ভাই ইয়াছিন, ইব্রাহীম চাচা আবদুল মালেকসহ পরিবারের লোকজন।

মানববন্ধনে মা আম্বিয়া খাতুন ও ভুক্তভোগি পরিবারের অভিযোগ, শাহীন একজন দুর্নীতিবাজ ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারিগর। সে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকুরীরত অবস্থা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদসহ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। এছাড়া শাহীন তার স্ত্রীকে এক মুক্তিযোদ্ধার নমিনী বানিয়ে টাকা উত্তোলন করছে। তাই এই প্রতারকের বিরুদ্ধে তদন্তসহ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।

অভিযুক্ত শাহীনের ভাতিজা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার দাদাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে শাহীন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আমার দাদিকে না জানিয়ে। তারপর তার প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ করলে শাহীন আমার পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে অভিযুক্ত শাহিন। এখন আবার নতুন মামলার হুমকি দিচ্ছেন। এবার নাকি তার মেয়েকে দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দিবেন। প্রশাসনের কাছে আমরা এই প্রতারণা ও জালিয়াতির বিচার চাই।

ভাই আবদুল মালেক জানান, তার ভাই মৃত আবদুল কাদের কখনও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তার ছেলে প্রতারণা করে তাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন।
স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন জানান, আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে যাননি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণও করেননি। ভাতা উত্তোলনের বিষয়েও আমি কিছু জানি না। শুনেছি আমার ছেলে শাহিন এমনটি করিয়াছেন।

অভিযুক্ত শাহিন বলেন, আমাদের পারিবারিক একটি দ্বন্দ্ব রয়েছে ভাইদের মধ্যে। দ্বন্দ্ব থেকে তারা আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে।
এই ব্যাপারে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ময়নাল হোসেন বলেন, তিনি বলেন আবদুল কাদের নামে এই এলাকায় কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। আমরা এই নামে কেউ চিনি না।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান বলেন, এই বিষয়ে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এটি তদন্তের জন্য উপজেলা থেকে মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রনালয় এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *