গোদাগাড়ীতে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না ইউনিয়ন ভূমি অফিসে!

মোঃ রবিউল ইসলাম মিনাল,গোদাগাড়ী :
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। সেবা নিতে সেখানে পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সেবাপ্রার্থী। ঘুষ দিতে না চাইলে গালিগালাজ এমনকি হুমকিও দেয়া হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে ঘুষ বাণিজ্য। প্রতিবাদ করলে গালিগালাজ এমনকি হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন।

কথায় কথায় তিনি রাজশাহীর বড় বড় নেতা, এমপি এমনকি মন্ত্রীর কাছের মানুষ হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দিয়ে চাপে রাখছেন সেবাপ্রার্থীদের। ঘুষ না পেলে একটি ফাইলও ছাড়েন না। শুধু তাই নয়, তারা একজনের জমি আরেকজনকে খারিজ দিয়ে চেক কাটেন এবং সংশোধনের নামে আবারও মোটা অংকের টাকা দাবি করে থাকেন।

ইতোমধ্যে উপ-সহকারী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদের টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও ক্লিপ সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এক সেবাপ্রার্থী অফিস সহায়ক হাসান সিদ্দিককে ১০০ টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি ধরছেন না। ওই সেবাপ্রার্থীকে জানাচ্ছেন, ১০০ টাকাতে কি হবে? অটো ভাড়াতেই তো ২০০ টাকা চলে যাবে। তোমাকে তো আগে সব বলা আছে।

টাকার অংক বাড়িয়ে ওই সেবা প্রার্থী তানভীর আহমেদের দিকে বাড়ান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে নেন। পরে তা হাসান সিদ্দিকের দিকে বাড়িয়ে দেন।

ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থী সাদিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, উপজেলার ৬ নং মাটিকাটা ইউনিয়নের জেএল নং ২১৭, দাগ নং ৫৯ এর বসত জমিটি তার পূর্বপুরুষ থেকে ভোগ-দখলে আছে। সমস্ত খতিয়ানেও তার পূর্বপুরুষদের নাম উল্লেখ আছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় বড়গাছি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে নুর আমিনকে খারিজ দেন। তিনি অবগত হয়ে প্রতিবাদ জানালে সংশোধনের নামে টাকা দাবি করেন ভূমি কর্মকর্তা। উপায় না পেয়ে তিনি তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।

সাদিকুল ইসলামের অভিযোগ, টাকা দেয়ার পরও তার কাজ হচ্ছে না। আজ-কাল করে তাকে হয়রানি করছেন ভূমি অফিসের লোকজন। বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি খারিজ পাননি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, নুর আমিনের অবৈধ খারিজ বাতিলের জন্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন ভূমি অফিসার। আবার সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য নায়েব তানভীরকে যাতায়াত খরচ বাবদ ৮০০ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার সহকারীকে ৪০০ টাকাও দেয় হয়েছে। পরে আবার খতিয়ানের তথ্য জানতে গিয়ে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা গুনতে হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেননি তারা।

সারমান আলী নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, কিছুদিন আগে আমি একটা খতিয়ানের বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে আমার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন ভূমি অফিসার তানভীর। কয়েকদিন অফিসে ধর্না দিয়ে কাজ না হওয়ায় পরে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। তারপরও আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া খতিয়ানের সঠিক তথ্য দেননি তারা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, ঘুষ নয়, তার দফতরে ভূমি উন্নয়ন কর নেয়া হয়। হয়তো সেই টাকা লেনদেনের ভিডিও এটি। ঘুষ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুন নাহার বলেন, আমার নায়েব সারাদিন খাজনা-খারিজের চেক কাটেন। আর সেটার ভিডিও করে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তুললে তো আর সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *