ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশুরহাটে ক্রেতা শূন্য দুশ্চিন্তায় খামারিরা

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট :
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাগেরহাটের হাটগুলোতে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও তেমন বেচাকেনা নেই। করোনার কারণে জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা পশু কিনতে আসছেন না। আদৌ হাট জমবে কিনা, ক্রেতারা আসবে কিনা- এ ধরণের নানা চিন্তা পেয়ে বসেছে তাদের। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে তারা লাভবান হতে পারবেন কিনা- সে চিন্তাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না খামারি ও পশু ব্যবসায়ীদের।

মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট জেলার অন্যতম বৃহৎ পশুরহাট বেতাগা হাটে প্রচুর পরিমান পশু দেখা যায়। পশুর সাথে হাটে মানুষের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু ক্রয় বিক্রয় নেই। হাট ইজারাদারের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি পালনের প্রচেষ্টা থাকলেও ক্রেতা বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।

খামারিরা বলছেন, সারাবছর গরু লালন-পালন করি। কোরবানি উপলক্ষে গরু বিক্রির করার জন্য। এবার করোনা আসার পরে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও বাধ্য হয়ে খাবার খাইয়েছি। কিন্তু হাটে গরু নিয়ে আসছি। ব্যবসায়ী ও ক্রেতা নেই বললেই চলে। যারা আছে তারা গরুর প্রকৃত দামের অর্ধেকও বলে না। কোরবানির আছে মাত্র কয়েকদিন। এখন ভাল দামে না বিক্রি করতে পারলে আর কি করব। এবার লোকসানের আর শেষ নেই আমাদের।

রবিউল নামের এক খামারি বলেন, পশু খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য। এছাড়া অন্যান্য খরচ মিলে গরুর লালন-পালনে ব্যয় বেড়েছে। হাটে ক্রেতা সমাগম না হলে লোকসান হবে বলে মনে করছেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানি উপলক্ষে এবছর যে গরু কিনেছি। তাতে আমাদের লস হবে। প্রত্যেকটি গরু দাম ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা কম বলছে বাজারে। বাজারে ক্রয়-বিক্রয় একদম কম। তার উপর খাজনা গেল বারের থেকে বেশি। এই অবস্থা থাকলে আমাদের লসে পরতে হবে।

গরু ব্যবসায়ী আলামিন আলম বলেন, তার কোরবানিযোগ্য ১০টি গরু রয়েছে। কিন্তু করোনার পরিস্থিতির কারণে এবার গরু কেনায় আগ্রহী কোনো ব্যাপারির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে পশুর হাটে ক্রেতার অভাবে দাম পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

এদিকে খামারের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, করোনার কারণে সঙ্কটে রয়েছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা। যারা সাধারণতঃ একাধিক ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকেন। ফলে তাদের অনেকেই চলতি বছর কোরবানি দিতে পারবেন কিনা- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এতে করে কোরবানির পশু বিক্রি কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

হাট ইজারাদাররা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গেল বছরের থেকে এবছর ক্রয় বিক্রয় অনেক কম। আমরা চেষ্টা করছি হাটে শতভাগ স্বাস্থ্য বিধি বজায় রাখতে। বাগেরহাট জেলার ৯ উপজেলায় ২০টি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এবছর কোন অস্থায়ী ও মৌসুমী হাট বসবে না বাগেরহাটে।

জেলা প্রাণি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফর রহমান জানান, করোনা পরিস্তিতিতে পর্যাপ্ত নিয়োম- শৃঙ্খলা মানার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। প্রত্যকটি হাটে গরু অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। একই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সকলকে সতর্ক করা হচ্ছে। খামারীদের স্বার্থ রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করার কথা জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *