স্বাভাবিক জীবনে ফিরে দস্যুরা খুশি : জীবন যাপনে নানান প্রতিবন্ধকতা -বাংলারদর্পন

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :ঐতিহ্য সুন্দরবন এখন জলদস্যু-বনদস্যুমুক্ত। দীর্ঘ সময় সুন্দরবনে দস্যুতার সাথে জড়িতরা সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। দস্যুতা ছেড়ে অস্ত্র-গুলি সরকারের কাছে জমা দিয়ে আলোর পথে এসেছেন তারা।

২০১৬সাল থেকে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে ও র‌্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)’র প্রত্যক্ষ প্রচেষ্টায় ২০১৮সালের ১লা নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৯ সালের ১লা নভেম্বর বাগেরহাটের শেখ হেলালউদ্দিন স্টেডিয়ামে দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের বর্ষপুর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এসকল মানুষ গুলোকে অহেতুক যাতে কেউ হয়রানী না করে সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি রাখতে হবে। একই সাথে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, র‌্যাব প্রধান (বর্তমানে পুলিশের আইজিপি) বেনজীর আহমেদ একই কথা বলেছিলেন। তবে আলোর পথে ফিরে আসা এসকল মানুষ গুলো বাস্তব জীবনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মূখিন হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২০১৬ সালের ৩১মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র‌্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)’র তৎকালীন প্রধান বেনজীর আহমেদ’র হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন ‘মাষ্টার বাহিনী’। ওই বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন সোহাগ আকঁন। সাবেক এ বনদস্যু স্বাভাবিক জীবন যাবনে অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে পার করছেন। সৎ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে তাকে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিপক্ষরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তার সাবেক পরিচয় সামনে এনে সুবিধা নেয়ার চেষ্টাও করে থাকেন।

সুত্রমতে, ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর সর্বশেষ ছয়টি জলদস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ৫৪জন সক্রিয় সদস্য ৫৮টি অস্ত্র ও ৩ হাজার ৩৫১টি গোলাবারুদ জমা দিয়ে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরআগে মোট ২৬টি বাহিনীর সর্বমোট ২৭৪ জন জলদস্যু, বনদস্যু আত্মসমর্পণ করেছেন। এসময় তারা ৪০৪টি অস্ত্র এবং ১৯ হাজার ১৫৩ রাউন্ড গুলি জমা দেয়।

এবিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে আত্মসমর্পণ করা মাষ্টার বাহিনীর সাবেক সেকেন্ড ইন কমান্ড বাগেরহাটের রামপালের বাসিন্দা সোহাগ আকঁন বলেন, কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে থাকতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। নানাভাবে হয়রানী ও মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। পুর্বের ইতিহাস টেনে সমাজে ডাকাত বলে সম্মোধন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসকল বিষয় গুলো তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে নজর দিতে অনুরোধ জানান।

আত্মসমর্পণ করা ‘আনারুল বাহিনীর’ প্রধান খুলনার কয়রার বাসিন্দা আনোয়ারুল বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বরদের কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পাইনা। এলাকার কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির চাহিদা মতো চাঁদা দিতে না পারায় মারপিটের শিকার হয়েছি। থানায় গিয়ে অভিযোগ করেও কোন বিচার পাইনি। পরিবার পরিজন নিয়ে সব সময় একটা অজানা আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে।

একই বাহিনীর মোস্তফা বলেন, একশ্রেণীর মানুষ সামাজিকভাবে আমাদের ঘৃনার চোখে দেখেন। তারা আমাদের নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা ও হয়রানীর জন্য চেষ্টায় থাকেন। আত্মসমর্পণের পর সৎ উপায়ে মাছ ও কাকঁড়ার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় ওই চক্রের হোতারা নিয়মিত চাঁদা দাবি করেন। তাদের কথা না শুনলে নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়।

আত্মসমর্পণ করা ‘দাদা ভাই বাহিনীর’ সদস্য মংলা উপজেলার বাসিন্দা মো. পলাশ, রামপালের বাসিন্দা মো. রেজা, ‘বড়ভাই বাহিনীর’ রফিক শেখ, রিপন শেখ, অলিয়ার রহমান, মাওলা ফকির, ‘শান্ত বাহিনীর’ খোরশেদ শেখ, ‘মাষ্টার বাহিনীর’সুলতান হোসেন একই ধরনের অভিযোগ করেন।

এবিষয়ে র‌্যাব-৬’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রওশনুল ফিরোজ বলেন, আত্মসমর্পণকৃত সাবেক বনদস্যুদের ও তাদের পরিবারের খোজ খবর র‌্যাব-৬’র পক্ষ থেকে নিয়মিত রাখা হয়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তাদেরকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রীসহ ত্রান বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া সামাজিকভাবে তারা যাতে হয়রানীর শিকার না হয়, এবিষয়ে নজরদারি রয়েছে। এসকল অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দেন তিনি। বাংলারদর্পন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *