কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের উলিপুরে করোনার বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে তিস্তা ও বহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলে চাষাবাদ করা পাট,ভুট্টা, মরিচক্ষেত ও বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।তিস্তা এবং বহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙন নদীকূলের মানুষকে নিরাশ্রয় এবং দিশেহারা করে তুলেছে।
তিস্তা ও ব্রহ্মপূত্র নদের অব্যাহত এ পরিস্থিতিতে পাউবো কর্তৃপক্ষ ব্রহ্মপূত্র নদের ভাঙন ঠেকাতে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পালের ভিটা ও হাতিয়া গ্রামে বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং করছেন।
কিন্তু তিস্তা নদীর ভাঙন রক্ষায় কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের পাঁকার মাথা ও গোড়াই পিয়ার ঝাকুয়াপাড়া নামকস্থানে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের বান্ডাল তৈরি করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
এদিকে তিস্তা নদী ভাঙন থেকে হোকডাঙ্গা, থেতরাই ও দলদলিয়া বাঁচাও গণকমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে শত শত মেট্রিক টন ফসল উৎপাদনকারী ঐতিহ্যবাহী জায়গা গুলো আজ তিস্তার বুকে ভাসমান হয়ে আছে, করোনা মাহামারিতে গৃহবন্দী অসহায় মানুষ গুলোর মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁই বাড়ি ভিটে টুকুও সর্বনাশা তিস্তার হাতে তুলে দিতে হচ্ছে।
এখন ঘুমানোর জায়গা নেই, ক্ষিধে মিটানোর জন্য পর্যাপ্ত খাবার নেই, কোথায় যাবে, কার কাছে একটু জায়গা চেয়ে নিয়ে ঘর বাঁধবে সেই চিন্তায় ধুকে ধুকে মরতেছে হোকডাঙ্গা, থেতরাই এর তিস্তা কবলিত অসহায় দারিদ্র্য মানুষ গুলো। তারাঁ জানেনা এ কষ্টের অবসান কবে ঘটবে, কবে শোষিত হবে তিস্তা ফিরে আসবে সোনালী ফসলের জমি গুলো! এক বুক আশা নিয়ে এখনো চেয়ে আছি সোনালী স্বপ্নীল দিনের অপেক্ষায়।
সরজমিনে ভাঙন কবলিত উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের পাঁকার মাথা ও গোড়াই পিয়ার ঝাকুয়াপাড়া নামকস্থানে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ বাঁশ দিয়ে বান্ডাল তৈরি করে ভাঙন রোধে শেষ আশ্রয় বসত ভিটে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
এব্যপারে থেতরাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আইয়ুব আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভাঙন রোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এসে তিনটি পয়েন্ট পরিদর্শন করেছেন। তিনি দাবি জানিয়েছেন গোড়াই পিয়ার থেকে চর গোড়াই পিয়ার পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার বোল্ডার দিয়ে আড়াআড়িভাবে বাঁধ নির্মাণ করলে তিস্তা ভাঙনের কবল থেকে থেতরাই বাসী রক্ষা পাবে বলে জানান।< তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসী নিজেরাই এলাকায় বাঁশ সংগ্রহ করে বান্ডাল তৈরি করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার, এলাকাবাসীর ও আমার পক্ষ থেকে দেয়া আর্থিক সহযোগীতায় বাঁশ-রশিসহ বিভিন্ন উপকরণ কিনে কাজ করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার বলেন, ভাঙনরোধে এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে বান্ডাল তৈরিতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। অপরদিকে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে উজানী ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। প্রায় ১৫'শ পরিবার পানি বন্দি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে যে হাতিয়া ইউনিয়নে আগাম এই মধ্যবর্তী বন্যার ফলে চর গুজিমারি, চর অনন্তপুর,চর দাগারকুঠি,চর জলংগার কুঠি এবং রামখানা,নীলকন্ঠ,কদমতল ও গাবুরজানসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ব্যাপারে হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আগাম এই মধ্যবর্তী বন্যার ফলে হাতিয়া ইউনিয়নের কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বর্তমান এই আগাম মধ্যবর্তী বন্যার সার্বিক বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন বলে তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আঃ কাদের বলেন,প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিস্তা ও বহ্মপুত্র নদী ভাঙনের কথা কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা পাড়ের ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে গিয়েছেন (পাউবো)কর্তৃপক্ষ। এব্যাপারে,কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙন রক্ষায় অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজের প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন হলে যতদ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করা হবে। অন্যদিকে হাতিয়া ইউনিয়নে বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং করছেন বলে জানান তিনি