ফুলগাজীতে করোনায় অর্থসংকটে আছেন কিন্ডারগার্টেনের ২শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী | বাংলারদর্পন

সাইফুল ইসলাম মজুমদার >>>
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ফুলগাজী উপজেলার ১৯টি কে.জি স্কুলের ২শতাধিক শিক্ষক কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। মানবেতর জীবন পার করছে এসব প্রতিষ্ঠানের মানুষ গড়ার কারিগর’রা।

জানা যায়, কিন্ডারগার্টেন তথা ব্যক্তিমালিকানাধীন স্কুল এবং কলেজগুলো সরকার বা অন্য কোন সংস্থার কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত। এর সংখ্যা সরকার গঠিত টাস্কফোর্সের আনুমানিক পরিসংখ্যান ৬০ হাজার। তবে প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এই ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সকল শ্রেণীতে ১ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। সেই সাথে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

ফুলগাজী উপজেলাতে ৩০ শতাংশ কে.জি স্কুল প্রাথমিক শিক্ষার চাহিদা পূরণ করছে। ছাত্রছাত্রীদের দেয়া বেতনে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘর ভাড়া,শিক্ষক বেতন,বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য ব্যায় নির্বাহ করা হয়। গত ৩ মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এ পরিস্থিতিতে ফুলগাজীতে ১৯ টি কে.জি স্কুলের ঘরভাড়া মওকূপ ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্রদান না করলে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখা যাবেনা বলে মন্তব্য করেছেন ফুলগাজী উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমএ হাসান।

তিনি বলেন, গত ১৬ মার্চ দুপুরে অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সকল ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান ৯৯% ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত বলে মাসিক সম্পূর্ণ আয়ের ৪০% ঘর ভাড়া, ৪০% শিক্ষক- কর্মচারী বেতন ভাতা, বাকি ২০% বা তারও বেশি গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ভর্তুকি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

ফুলগাজী উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশানের যুগ্ন সম্পাদক রাহাত চৌধুরী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ঈদুল ফিতরের পরে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশ আসে আমাদের কী অবস্থা হবে? যদি এরকম অবস্থা হয় তাহলে এপ্রিল মাসের ঘর ভাড়া, সাথে শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দের ৩ মাসের বেতন ভাতা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য ব্যয়ভার এই ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পড়বে।

ফুলগাজী শিশু নিকেতন মডেল স্কুলের প্রধান হিসাব সহকারি শিরিনা আক্তার জানান, শিক্ষকরা ৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। বেতন আদায়ের বিষয়ে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া মেলেনি। এতে করে হতাশায় দিন কাটছে প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের।

বর্তমানে ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও শিক্ষক শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকলেই দিশেহারা। তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছেন। একদিকে করোনা আতংক, অন্যদিকে জীবিকা নির্বাহ। অনেকের শেষ আশ্রয়স্থল প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ।

উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশানের সভাপতি জামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার মহানুভবতায় গৃহহীন -ভূমিহীনরা ৬ মাসের খাদ্য ও নগদ অর্থ পাবে। গার্মেন্টসের মালিক শিল্পপতিরা তাদের শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পাবে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাসায় বসে থাকলেও বেতন-ভাতাসহ সকল সুবিধা ভোগ করবে। কিন্তু আমরা ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকবৃন্দ এই বিশাল ব্যয়ভার কিভাবে বহন করব? যেখানে কোন বাণিজ্যিক ব্যাংক আমাদের লোন পর্যন্ত দেয় না।

প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সুবিবেচনা ও বিশেষ মানবিকতা কামনা করে ‘বাংলাদেশের সকল ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই বিশাল ব্যয়ভার বহনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা অধিদপ্তরের মাধ্যমে যেভাবে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয় অথবা যে কোন মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আনুমানিক ব্যয় অনুপাতে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করলে এই বিশাল শিক্ষক সমাজ আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে এবং আপনার কথা মনে রাখবে।

বাংলারদর্পন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *