“অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর ” বিষয়টা এ রকম । অস্ত্রসহ সোনাগাজীর এক ত্যাগী যুবলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে তাই অবশ্যই পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিতে হবে ! প্রশাসনকে ধন্যবাদ না দিলে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হয় ! কারন পুলিশ অনেক বড় একটি দায়িত্ব নিয়েই ত্যাগী যুবলীগ কর্মী সবুজকে গ্রেপ্তার করেছেন ! এ রকম ত্যাগীদের ধরলে আমি মাঝে মাঝে প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিয়ে থাকি !
বিগত ১২ বছরেই প্রশাসন এ রকম অনেক ত্যাগীদেরকে যখন অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছেন তখন আমি ধন্যবাদ জানিয়েছি ! আনি না শুধু, রাষ্ট্রীয়ভাবেও ওই সকল পুলিশ সদস্যরা পুরষ্কার পাচ্ছেন এবং তাদের পদোন্নতি হচ্ছে । এছাড়া হাইব্রিড আওয়ামীলীগের কাছ থেকে ভালো বকশিসও পেয়ে থাকেন । দলের প্রকৃত/ত্যাগীকর্মী গ্রেপ্তার মানে এক ডিলে দুই পাখি শিকার করা । অর্থাৎ পদোন্নতি হওয়া এবং বকশিস পাওয়া । সেই ক্ষেত্রে আমি ধন্যবাদ দিলে সমস্যা কোথায় ?
তবে, এ সকল ত্যাগী আ’লীগ -যুবলীগ -ছাত্রলীগ সহ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারলে বিএনপির কাছ থেকেও বাহ- বা পেয়ে থাকে পুলিশ প্রশাসন । কারন , ত্যাগী আওয়ামীলীগ কর্মীরা বিএনপির প্রতিপক্ষ । কিন্তু কোন হাইব্রিড আওয়ামীলীগ বিএনপির প্রতিপক্ষ নন । বিশেষ করে দুইটি কারনে ত্যাগী আওয়ামীলীগরা বিএনপির প্রতিপক্ষ : প্রথমত, আওয়ামীলীগের দুর্দিনে বিএনপির সাথে রাজপথে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া , হামলা – মামলা সব কিছু হয়েছে ত্যাগী আওয়ামীলীগ বনাম বিএনপির মধ্যে । তখন হাইব্রিডরা ছিলনা বা তাঁরা অনেকেই বিএনপিতেই ছিলেন ।
দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে যদি কখনো আওয়ামীলীগ ক্ষমতা হারায় হাইব্রিডরা পালিয়ে যাবে । কিন্তু ত্যাগীরা পালাবে না । তখন এই প্রকৃত ও ত্যাগী আ’লীগ কর্মীরা রাজপথে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া , পিকেটিং করবে বিএনপির সাথে । এ ছাড়া হাইব্রিড আওয়ামীলীগের সাথে বিএনপির রয়েছে সু-সম্পর্ক । বিএনপি কখনো হাইব্রিড আওয়ামীলীগ কর্মীদের ক্ষতি করবে না ।
আমি খুবেই মর্মহত , আঘাতপ্রাপ্ত । কারন , বিগত ১২ বছরে ফেনী জেলায় অসংখ্য ত্যাগী আওয়ামীলীগ কর্মীদের নিধন করা হয়েছে । কাউকে মাস্টার প্লান করে খুন করা হয়েছে , কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে , কাউকে মাদক বা অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে । তবে, বিগত ১২ বছরে ফেনীতে যে সকল ত্যাগী আওয়ামীলীগ নিধন হয়েছে সকল অপকর্মে হাইব্রিড আওয়ামীলীগের সাথে পুলিশ প্রশাসন সরাসরি জড়িত ।
প্রশ্ন থাকতে পারে ত্যাগী আওয়ামীলীগ নিধনে পুলিশ প্রশাসন সরাসরি জড়িত কিভাবে ? প্রথমত, ফেনী জেলা বিএনপির ঘাঁটি । এ জেলাতেই খালেদার পৈত্রিক বাড়ি । অতিতের রেকর্ড মতে এ জেলার বিএনপির কাছে অসংখ্য অস্ত্র আছে । বিএনপির কাছ থেকে প্রশাসন বিগত ১২ বছরে কয়টা অস্ত্র উদ্ধার করেছে ? বিএনপির কত জন অস্ত্র ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ? অন্যদিকে বিগত ১২ বছরে ত্যাগী আওয়ামীলীগের কাছ থেকে কয়টা অস্ত্র উদ্ধার করেছে ? কত জন ত্যাগী আওয়ামীলীগ গ্রেপ্তার করেছে ? কত জন ত্যাগী আওয়ামীলীগ খুন হয়েছে ? কত জন ত্যাগী আওয়ামীলীগ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ? পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিএনপির থেকে ত্যাগী আওয়ামীলীগ কর্মীরাই বেশী গ্রেপ্তার -খুন- নিহত হয়েছে । আর হাইব্রিড আওয়ামীলীগের সাথে মিলে মিশে রাজার হালে আছে বিএনপি । উল্টো নিধন করা হচ্ছে ত্যাগী আওয়ামীলীগকে। দ্বিতীয়ত, গেল দুই জাতিয় নির্বাচনে ফেনীতে বিএনপি চক্র অসংখ্য নাশকতা করেছে কয়টা মামলা হয়েছে ? কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে ? ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীরা কই ?
তৃতীয়ত, ফেনীতে বিএনপি চক্রের মোস্ট ওয়ারেন্টভুক্ত অসংখ্য আসামীরা প্রশাসনের মোস্ট বন্ধু । উল্টো গোপন সংবাদের নামে ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের ঘর/বাসা থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেন । চতুর্থত, ফেনীতে প্রশাসনের ৭০ ভাগ বিএনপি পন্থী । এ সকল বিএনপি পন্থী প্রশাসনের লোকগুলো বছরের পর বছর ধরে ফেনীতে আছেন । কারন কি ? তারা বদলী হয় না কেন ? এ সকল বিএনপি পন্থী প্রশাসনকে কারা – কাদের লাভে রাখা হচ্ছে ? ওই সকল বিএনপি পন্থী প্রশাসনের লোকেরাই ত্যাগী আওয়ামীলীগ নিধন করার মিশন নিয়েছে । অন্যদিকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের কয়েক জন ভালো অফিসার থাকলেও তারা অসহায় ।
পঞ্চমত, প্রশাসনকে গোপন সংবাদ কারা দেন ? সেই- গোপন সংবাদে বিএনপির বাড়ি/ঘর থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয় না কেন ? সেই গোপন সংবাদে বিএনপির আসামীদেরকে ধরা হয় না কেন ? সেই গোপন সংবাদে আদালতে বিএনপির ক্যাডারদের পক্সি হাজিরার তথ্য নেই কেন ? সেই গোপন সংবাদে নাশকতা মামলার আসামীদের তথ্য নেই কেন ? ষষ্ঠত, শুনেছি সাম্প্রতিক সময় হাইব্রিড আওয়ামীলীগ একটি তালিকা করে পুলিশ প্রশাসনকে দিয়েছে । ওই তালিকা অনুযায়ী ত্যাগীদেরকে নিধন করা হবে । এটা তালিকাটি কিসের আলামত ?
সপ্তমত, বর্তমানে কোন বিএনপির বাড়ী/ঘরে পুলিশ প্রশাসন যায় না । শুধুই ত্যাগী আওয়ামীলীগের বাড়িতে যায় । আমার জানামতে সোনাগাজীর চর দরবেশ ইউনিয়নে এক যুবলীগ নেতার বাড়িতে পুলিশ প্রতি সাপ্তাহে দুইবার যান । কিন্তু এই ত্যাগী যুবলীগ নেতার বাড়ির চারপাশে বিএনপির ঘাটি প্রশাসন পুলিশ ভুলেও বিএনপির ক্যাডারদের বাড়ি/ঘরে যান না । তার আশেপাশে যাই ঘটুক।

এখন কথা হলো সোনাগাজী মঙ্গলকান্দির প্রকৃত ও ত্যাগী যুবলীগ কর্মী গুরামিয়া সবুজকে গ্রেপ্তার করায় পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়ে আমার ফেইজবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছি । সেখানে জেলার সাবেক ছাত্রনেতা ও যুবলীগ নেতা আজারুল হক আরজু ভাই ব্যাখ্যা চেয়েছেন, কেন পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়েছি । লেখার শুরুতেই দিয়েছি । অর্থাৎ উপরের ৫ লাইনে উত্তর দিয়েছি । তবুও- ( অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর – বিষয়টা এ রকম । পুলিশ অস্ত্রসহ ত্যাগী যুবলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে তাই অবশ্যই প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিতে হবে ! না হলে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হয় !
কি লিখবো ভাষা খুজে পাচ্ছি না । অর্থাৎ লেখনির মাধ্যমে আরজু ভাইকে কি ভাবে উপস্থাপন করবো বুঝতে পারছিনা । তিনি পুলিশকে ধন্যবাদ দেয়ার ব্যাখ্যা চাইতে গিয়ে এখন উল্টো আমার লেখনির খোঁচায় পড়ে গেলেন । আরজু ভাই, আপনিতো এক সময় ফেনী জেলা ছাত্রলীগ – যুবলীগের দায়ীত্বশীল নেতা ছিলেন ।
সেই কারনে আপনার অসংখ্য কর্মী আছে । আপনি আপনার কর্মীদেরকে কি ভাবে দেখেন ? তাদের সুখ- দুঃখে খোঁজ খবর নেন ? কত জনের কর্মীর খোঁজ খবর নেন ? আপনার কর্মীদেরকে প্রশাসন হয়রানি বা গ্রেপ্তার করলে তখন আপনি প্রশাসনকে ফোন করলে আপনার কর্মী রক্ষা পায় ? না , পায় না । প্রশাসন আপনার কথা শুনবে না । কারন , কন্ট্রাকের মাধ্যমেই গ্রেপ্তার করা হয় । প্রশাসন আপনার কথা শুনার সময় নেই । আরজু ভাই, আপনি রাজনীতি ছেড়ে দেন । কারন , রাজনীতি করতে হলে বর্তমানে টাকা লাগে । আপনার কাছে টাকা নেই । আপনি রাজনীতি ছেড়ে দিলে আপনার কর্মীরা রক্ষা পাবে । আপনি রাজনীতি না ছাড়লে আপনার কর্মীরা পালিয়ে থাকতে হবে বা কারাগারে থাকতে হবে ।
আরেকটু বলি , সবুজকে গ্রেপ্তার করায় পুলিশকে ধন্যবাদ দেয়াতে অনেকেই আমাকে গালাগালি করেছেন । কেন ? আমার অপরাধ কি ? আপনারা আপনাদের ফেইসবুকে প্রতিবাদ না করে অামার বিরুদ্ধে লেখার কারন কি ?
আরজু ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আশাকরি ব্যাখ্যা পেয়েছেন ।
লেখক -নান্টু লাল দাস ;
স্টাফ রিপোর্টার , ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি ।