হুমায়ুন কবির হিমুর টাইমলাইন থেকে নেয়া, হুমায়ুন কবিরের একমাত্র ছেলে শিহান কবীর (স্বাধীন) তার বাবাকে বাঁচানোর জন্য সকলের কাছে আকুতি জানিয়েছিল । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছিল। সেই হৃদয়বিদারক লেখা যা পড়ে বুকটা কেঁপে উঠল!
লিখাটা হুবহু তুলে ধরা হলো :
আমার বাবা, এস এম হুমায়ূন কবীর হিমু। বর্তমান দায়িত্বরত সাধারণ সম্পাদক ২২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ।
জন্মের পর যখন থেকে ভাল মন্দের বুঝ হয়েছে তখন থেকেই দেখি বাবা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, তাও যেমন তেমন কোন দল নয়- বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ। বঙ্গবন্ধুর নামে কেউ কটাক্ষ করলেও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখেছি আমার বাবাকে, আমার বাবার মনের মধ্যে ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অগাধ সম্মান ও ভালবাসা- যার জন্যই হয়তোবা সেই একই সম্মান ও ভালবাসা নিয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতেন। যুবক বয়স থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে এখন তার বয়স ৫৫ বছর।
আমার দেখামতে রাজনীতির এমন কোন দলীয় কার্যক্রম নেই যার মধ্যে আমার বাবা অংশগ্রহণ করেননি। সুস্থ থাক কিংবা অসুস্থ সংগঠনের ডাক দেয়া কোন কার্যক্রম, সমাবেশ, মিছিল-মিটিং- হরতাল সফল করার লক্ষ্যে সবকিছুতেই আমার বাবার অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ্য। রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং দায়িত্ব পালন করতে করতেই হয়তোবা সময় দিতে পারেনি আমাকে, তার পরিবার-ভাই বোনদের। কিভাবেই বা দিবেন? তার পরিবার তো ছিল তার রাজনৈতিক সংগঠন! আর কিভাবেই বা অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাবেন? তার জীবন তো ছিল আওয়ামীলীগের রাজনীতি এবং আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। রাজনীতির মাঠে ছিলেন সে সুস্থ এবং বলীয়ান কিন্তু ঘরে দেখা পেতাম তার বার্ধক্য এবং শারীরিক অসুস্থতা। হাজার অসুস্থতার মাঝেও তিনি রাজনৈতিক কোন কার্যক্রম থেকে পিছু হটেননি কারণ আওয়ামীলীগের রাজনীতি এবং কর্মীবৃন্দরাই ছিল তার জীবন, রাজনৈতিক জীবন এর কথা ভাবতে ভাবতেই তিনি নিজের শরীরের যত্ন এবং সুস্থতার দিকে নজর দিতে ভুলেই গেছেন।
এই গত জাতীয় নির্বাচন তথা মেয়র-কাউন্সিলর নির্বাচনেও যখন আমার বাবার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকীর্ণ তখনো তিনি ঘরে বসে থাকেননি। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা এবং দলের মনোনীত প্রার্থীকে জয়যুক্ত করার জন্য এবং সকল প্রকার মিছিল সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যেও তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং তিনি সার্থক হয়েছেন কারণ তার দলেরই জয় হয়েছে এবং দলের মনোনয়ন কৃত প্রার্থীই মনোনীত হয়েছেন তবে জয় হয়নি তার শারীরিক সুস্থতার, দলের জন্য কাজ করতে করতে মিটিং মিছিল- সমাবেশ সফল করতে করতে তিনি তার শারীরিক অবস্থার কথাই ভুলে গেছেন। তবে তার ভালবাসার রাজনৈতিক সংগঠনও এর দেখার মত প্রতিদান দিল- তারা তাদের চোখে কালো কাপড় বেধে নিলেন, আমার বাবার অসুস্থতা এখন কারোই চোখে পড়ে নাহ কিংবা চোখে পড়লেও তাদের কিছুই করার নেই বলে জানান।
আমার বাবার যখন যতটুকু সাধ্য ছিল তখন তিনি অনেক সময়ই আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন কিন্তু এখন তার সাহায্য সহযোগিতার জন্য কেউই পাশে নেই- কারণ এখন যে সে অসুস্থ তার তো আর দেয়ার মত কিছু নেই। সময়, জীবন-যৌবন, সম্মান ভালোবাসা সবই তো দিলেন আওয়ামীলীগ এবং আওয়ামীলীগের নেতকর্মীদের জন্য কিন্তু আজ তারা কোথায়? এত শত শত হাজার কর্মী তারা কোথায়? এখন হয়তোবা বলতে পারেন করোনা ঝুকির কথা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে করোনা ঝুকির ভয় অবশ্যই নেই।
কই আমি তো কারো সাহায্যের হাত দেখি না? আমার বাবা আজ মৃত্যু শয্যায় আর আমি একা তার পাশে- আমি তো কাউকে দেখছি না, আমি তো ধরার মত কারো হাত পাচ্ছি না। নিরুপায়ের মত ফোনে পাবার চেষ্টা করছি কত মানুষকে। কোথায় তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা? কোথায় তার লিডাররা? কোথায় পাব একটি সাহায্যের হাত? কোথায় তার প্রানের সংগঠন আওয়ামীলীগ? কিভাবে করাবো তার এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা? আমার বয়স ২৪ বছর আমি একটি ছোট চাকরি করতাম সেটিওতো করোনার ঝুকির কারনে বন্ধ- আমি তো নিরুপায়, বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে বাবার মৃত্যু চোখের সামনে আমি কিভাবে দেখবো?
আমার বাবা এখনো মগবাজার রাশমনো হাস্পাতালের আইসিউতে আছেন। টাকার অভাবে হয়তোবা তাকে বাসায় নিয়ে যেয়ে বিছানায় ফেলে রাখতে হবে আর আমার চোখের সামনে দেখতে হবে সে কাতরাচ্ছেন! আমার তো কিছুই করার নেই দেখা ছাড়া। অনেককেই ফোন করেছি, সাহায্য চেয়েছি বাবার চিকিৎসার জন্য কারো কাছ থেকেই তেমন কোন আশা পাইনি। আমার বাবা রাজনীতির জন্য তার সারা জীবন পরিশ্রম করে গেলেন তার রাজনীতি এখন কোথায়? চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার হাত কে বাড়াবে?
সকলেরই সমস্যা আছে আমিও তা ভাল করেই বুঝি কিন্তু এই সকলেই যদি একটি প্রান বাচানোর চেষ্টা করে নিশ্চই সেটা সম্ভব- অবশ্যই হায়াত-মৃত্যু আল্লাহর হাতে কিন্তু চেষ্টা তো আমরা করতেই পারি। কেউ যদি চেষ্টা নাও করে আমার তো করতে হবে- তিনি তো আমার বাবা কিন্তু কাকে শুনাবো আমার চিতকার? কে সাহায্য করবে? নিশ্চই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি জানতে পারতেন কোন একটা ব্যবস্থা করে দিতেন কারণ তিনি তার কর্মীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেন না এটা আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু আমার মত এই ক্ষুদ্র একজন মানুষ কখনোই তার দ্বারপ্রান্ত হতে পারবে না। আমার আকুল আবেদন যেন আমার বাবার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
আমার বাবাকে একটি প্রশ্ন করতে অনেক ইচ্ছা হয়, ”কি দিল তোমাকে তোমার এই প্রানের রাজনীতি? ”
হয়তোবা তার উত্তর হবে, ‘ সম্মান ও রামপুরার মানুষের ভালোবাসা’।
আমি শুধু মাত্র বলতে চাই এখনো যাদের চোখে পড়েনি কিংবা এড়িয়ে যাচ্ছেন, সবার মৃত্যুই একসময় হবে তবে কিছু কিছু সময় আমাদের সুযোগ থাকে কারো জীবন বাচানোর একটিবার চেষ্টা করার। আমার বাবাকেও বাচানো সম্ভব।
কারো মনে যদি কষ্ট দিয়ে থাকি আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। সকলে আমার বাবাকে মাফ করে দিবেন আমাকেও ক্ষমা করবেন।
যদি সাহায্য করা সম্ভব হয় অবশ্যই আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন সরাসরি রাশমনো হাসপাতালের ৪ তলায় আইসিউ ইউনিটে কিংবা এই নম্বরেঃ ০১৬৮৬২২২০৫৭
শিহান কবীর (স্বাধীন)।
উল্লেখ্য ২৬এপ্রিল ভোরে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহ। বাংলারদর্পন