থানায় যুবককে নির্যাতন করে হত্যা, আমতলীর সেই ওসি প্রত্যাহার > বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক :

বরগুনার আমতলী থানা হাজতে শানু হাওলাদার নামে এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় এই থানার ওসি মো. আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের এক আদেশে বরিশাল ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম নির্দেশে বরগুনা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন পিপিএম স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

ওসিকে আমতলী থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এলাকার সাধারণ মানুষ দ্রুত ওসি আবুল বাশারের বিচার দাবি করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামে গত বছর ৩ নভেম্বরে ইব্রাহিম নামের একজনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যা মামলায় শানু হাওলাদারের সৎ ভাই মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভুক্ত আসামি।

ওই মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে শানু হাওলদারকে গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তাকে ধরে নিয়ে আসার পর আমতলী থানা ওসি আবুল বাশার ও পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি তার পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই টাকা দিতে অস্বীকার করে তার পরিবার।

টাকা না পেয়ে শানু হাওলাদারকে থানা হাজতে রেখে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করে। পরে নিহতের ছেলে সাকিব হোসেন মঙ্গলবার ওসি আবুল বাশারকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়। কিন্তু তাতে তিনি তুষ্ট হয়নি। নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।

বুধবার পরিবারের লোকজন এসে শানু হাওলাদারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পুলিশ দেখা করতে দেয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে আমতলী থানার ওসি আবুল বাশার দাবি করেন, শানু টয়লেটে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ তাকে টয়লেটে নিয়ে যায়। পরে এক ফাঁকে মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষে ফ্যানের সাথে রশি পেঁচিয়ে শানু হাওলাদার আত্মহত্যা করেছে।

এ ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ, এসপি পদায়ন) মো. তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর) মো. মহব্বত আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম। দায়িত্ব অবহেলার দায়ে তাৎক্ষনিক বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন।

এদিকে তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে শুক্রবার বিকালে পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের আদেশে ওসি আবুল বাশারকে আমতলী থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, একজন নির্দোষী মানুষকে থানা হাজতে টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করবে এটা মেনে নেয়া যায় না। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

নিহত শানু হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারের প্রত্যাহারের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি। তিনিই টাকা না পেয়ে আমার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকারী ওসির দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

তদন্ত কমিটির প্রধান বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ, এসপি পদায়ন) মো. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, থানায় আসামির মৃত্যুর মূল কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কাজ শুরু করেছি। অল্প দিনের মধ্যেই তদন্ত কাজ শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *