করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের সব হাসপাতালে হচ্ছে আইসোলেশন ইউনিট

ডেস্ক রিপোর্ট :
চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন (2019-nCoV) করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরই অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে, বিশেষ করে আটটি বিভাগের জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে কমপক্ষে ৫ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট চালু করা হচ্ছে।

তিনটি বিমানবন্দর, দুটি সমুদ্রবন্দরসহ দেশের ২৪টি প্রবেশপথে নেয়া হয়েছে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। খোলা হয়েছে হেলথ ডেস্ক। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইতিমধ্যে চীন ফেরত ২৪৭০ জন যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

এই ভাইরাস কোনোভাবেই যেন দেশে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে আজ সচিবালয়ে চীন ভ্রমণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রনালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে চীন থেকে যেসব বাংলাদেশি দেশে ফিরতে চান, তাদের আরও ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে ১৪ দিন পর্যন্ত উহানে কাউকে প্রবেশ কিংবা চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে যেতে দেবে না স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

সোমবার দুপুরে বেইজিংয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃত করে বেইজিং থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক বার্তায় এ কথা জানানো হয়।

২৬ জানুয়ারি রোববার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক পত্রে দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট স্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, চীনের সংক্রমিত নতুন (2019-nCoV) করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে।

এই ভাইরাস প্রতিরোধে এবং নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত আবশ্যক। এরই অংশ হিসেবে সংক্রমিত রোগীদের সেবায় সব হাসপাতালে অক্সিজেন এবং অন্যান্য সুবিধাসহ ৫টি বিছানা সংবলিত আইসোলেন ইউনিট নির্দিষ্টকরণের জন্য অনুরোধ করা হল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, দেশের সব হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট চালু করতে রোববার রাতেই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সোমবার অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষ থেকে বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি।

স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিশেষ করে মাস্ক, টুপি, হ্যান্ড গ্লোবস, চশমা, অ্যাপ্রোন, রেইনকোর্ট ইত্যাদি প্রয়োজনমতো সংগ্রহে রাখতে বলেছি। দেশে নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া না গেলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রোববার রাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এই রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হয়। আমরা দেরি না করে, সেগুলো সব সিভিল সার্জনদের এবং বিভাগীয় পরিচালকদের পাঠিয়েছি এবং ওইসব নির্দেশনা মেনে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মরত চিকিৎকদের প্রশিক্ষণ দিতে বলেছি।

পাশাপাশি তিনটি বিমান, দুটি সমুদ্রবন্দরসহ দেশের ২৪টি প্রবেশপথে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ হেলথ ডেস্ক স্থাপনে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। স্থলবন্দরে আপাতত বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের হেলথ কার্ডের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর পরিমাপের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (হেলথ ইমার্জেন্স অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম) ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার ও হ্যান্ড স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে দুই হাজার ৪৭০ জন যাত্রীকে স্ক্যান করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত দেশে কোনো 2019-nCoV করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।

এদিকে চীনে ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে আজ। এর আগে রোববার এ রোগ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বৈঠক করতে মন্ত্রীকে পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুসারে আজ দুপুর ১২টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। চীন ও আশপাশের দেশ ছাড়া বাকি দেশ থেকে আসা যাত্রীরা এ পরীক্ষার আওতামুক্ত। যদিও শাহ আমানতে চীনের সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সরওয়ার-ই-জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এই ভাইরাস মোকাবেলায় সোমবার দুপুরে নগরীর টাইগারপাসস্থ সিটি মেয়র কার্যালয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *