আমেরিকার সাথে কোন দেশ যুদ্ধে জিতবে না কারন আমেরিকা মানে পৃথিবী

সোহেল রানা >>>
আমেরিকার সাথে যুদ্ধ জেতা বা আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করা পৃথিবীর সব দেশের জন্যই সবসময়ই কঠিণ হবে।

কারণ :
প্রথমত, আমেরিকা কোন দেশ না। এটা একটা পৃথিবী। আপনি একটা দেশ। ফলে লড়াই হলে সেটি হবে দেশ বনাম পৃথিবী। পৃথিবীর সব দেশের মেধাবী লোকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আমেরিকার পক্ষে কাজ করে। এদেশের একটা বড় অংশের লোকের কোন দেশপ্রেম নাই। এবং এটাই এদের সবচেয়ে বড় শক্তি। যুক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান এদের গাইড করে; বিশ্বাস বা আবেগ না।

দ্বিতীয়ত, ভাবুন তো বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবীরা কোথায় থাকে? চীনের সবচেয়ে মেধাবিরা কোথায় থাকে? ভারতের সবচেয়ে মেধাবীরা কোথায়? এতো মেধা এই দেশে এসে ঘাস কাটে বলে আপনার মনে হয়। কি ক্যান্সার গবেষণা, কি যুদ্ধজাহাজ গবেষণা, কি মহাকাশ গবেষণা, এরা পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবীদের এদেশে এনে কাজ করতে দেয়।
আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তার ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের শতকরা ৪০ ভাগেরও বেশি শিক্ষক হয় চাইনিজ নাহলে রাশিয়ান নাহয় ভারতীয়। ভাবেন তো রাশিয়া বা চায়না আসলে কার সাথে যুদ্ধ করবে? আমেরিকার বুদ্ধি ও প্রযুক্তি শুধু যে আমেরিকানরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তা না, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভিনদেশীরাও। এদেশের আইটি সেক্টর উন্নত করছে ভারতীয়রা, প্রযুক্তি আগাচ্ছে চাইনিজরা। বাংলাদেশের বুয়েট, ঢাবি থেকে যারা বিদেশে আসে তাদের সিংহভাগ কোথায় যায় বলতে পারেন?

তৃতীয়ত, আপনি যখন বসে বসে আপনার দেশপ্রেম নিয়ে গবেষণা করেন তখন এই দেশের এরা গবেষণা করে কিভাবে ড্রোনকে আরো উন্নত করা যাবে, আরো উন্নত ফাইটার প্লেইন বানানো যাবে, আরো উন্নত কম্পিউটার বানানো যাবে, ক্যান্সারকে কার্যকরভাবে ফাইট করা যাবে, কিভাবে নতুন নতুন ড্রাগ বানানো যাবে। বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত এরা গবেষণার মধ্য দিয়ে নেয়, পড়াশোনা করে নেয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উন্নত মানের গবেষণা প্রকাশ করে আমেরিকা, সেই খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ও করে আমেরিকা। এসব গবেষণায় এদের রাষ্ট্রকে উন্নত করে। যেকোন র‍্যাংকিং এ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১-১৭ টিই হবে আমেরিকার। এটাই আমেরিকার শক্তি। এসব প্রতিষ্ঠানের গবেষণাই এদের জনজীবনকে প্রতিদিন সমৃদ্ধ করে। না দেশপ্রেম, না সামরিক শক্তি।

এখন পর্যন্ত যেসব বিজ্ঞানীরা ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ফিজিওলজিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তার শতকরা ৪১ ভাগ আমেরিকান। আরো বড় কথা হলো, এসব ক্ষেত্রে নোবেল বিজয়ীদের শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাওয়া। মানে নোবেল বিজয়ীদের এসব গবেষণা আদতে আমেরিকার উপকারই করেছে। এক হার্ভার্ডেরই নোবেলের সংখ্যা ১২৫। এমনকি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গরীবের ঝুলিতেও পড়ছে ২৩টি নোবেল পুরস্কার। মনে রাখবেন শান্তি, অর্থনীতি, সাহিত্যের নোবেল রাজনৈতিক হতে পারে তবে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ফিজিওলজির নোবেল ডিজার্ভিংরাই পায়।

চতুর্থত, আমেরিকা একটি মুক্ত দেশ, মুক্ত সমাজ। এখানে বাক, কর্ম ভয়ংকর পরিমাণে স্বাধীন। এরা আপনাকে এই দেশের নাগরিকত্ব দিবে এবং আপনাকে বেশ বড় অর্থ উপার্জনের সুযোগ দিবে। ফলে আমেরিকা বসবাসের জন্য, সুযোগ সুবিধার জন্য সবসময়ই অন্য দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করবে। অনেকে ভাবেন আমেরিকা যুদ্ধে সৈন্য মৃত্যুর সংবাদ গোপন করবে। সেটি এই দেশে করা কতো কঠিন তা আপনার কল্পনাতেই নাই। সেটি করলে ইরানের কিছু করা লাগবে না এদেশের মানুষই প্রেসিডেন্টকে নামিয়ে দিবে।

ফলে, আমেরিকার সাথে পারতে হলে আপনার যুক্তি, বুদ্ধি, গবেষণায় পারতে হবে। নিজেদের মধ্যে ওদের মতো শৃংখলা নিয়ে আসতে হবে। আপনার রাষ্ট্রকে চালাতে হবে যুক্তি ও গবেষণা দিয়ে। আপনার কাজে, সিদ্ধান্তে, প্রযুক্তিতে বুদ্ধির ছাপ থাকতে হবে, আপনি হোমওয়ার্ক করেছেন সেটি বোঝাতে হবে। বিশ্বাস দিয়ে, শুন্য আবেগের বুলি দিয়ে আর অযাচিত গর্ব দিয়ে আপনি ওদের সাথে জিততে পারবেন বলে মনে হয় না। লিখে রাখতে পারেন।

তাই বলে কি কেউ জিতে নাই? ভিয়েতনাম জিতছে, আফগানিস্তান লাইনে আছে। হ্যা, আপনার সব যে ঠিক হবে তা তো না! খুব বড় খেলোয়াড়রও পেনাল্টি মিস হতে পারে। কিন্তু আমি যে যুদ্ধকে মিন করেছি তা বোধহয় শুধুই নিজ দেশ থেকে বিদেশী শক্তি বিতাড়িত করা না। গত ৮০ বছরে আমেরিকার মাটিতে যারাই যৎসামান্য আক্রমন করছে তাদের সবারই পরিণতি হইছে ভয়াবহ। জাপান, জার্মানি, আফগানিস্তান তার উদাহরণ।

লেখক : সহকারি সচিব,বাংলাদেশ। সম্পদনা :বাংলারদর্পন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *