ফেনীর পরশুরাম সরকারী কলেজে ২৩ টি পদের মধ্যে ১৬টি শুন্য !

এম.এ.হাসান- পরশুরাম (ফেনী) থেকে :প্রকাশ- ১৪ নভেম্বর১৬।
পরশুরাম সরকারী ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকের ২৩টি পদের মধ্যে অধ্যক্ষসহ ১৬টি পদই শূণ্য। উপাধ্যক্ষসহ বর্তমানে ৭জন শিক্ষক রয়েছেন। ইংরেজীসহ ৮টি বিষয়ে কোন শিক্ষক নেই। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। অর্জন হচ্ছেনা কাংখিত ফলাফল। শিক্ষক শূন্যতার কারনে ঠিকমত শ্রেনীকার্যক্রম না চলায় অনেক শিক্ষার্থী কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কলেজে অধ্যক্ষ পদ শূণ্য। ইংরেজী, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, রসায়নবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং দর্শন সহ ৮টি বিষয়ে কোন শিক্ষক নেই। রুটিন মাফিক পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় গত এইচএসসি পরীক্ষায় এ কলেজটি থেকে ৩০৯ জন পরীক্ষা দিয়ে ১৮১ জন শিক্ষার্থী ফেল করে। এতো অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করায় অভিভাবকসহ সকলকে ভাবিয়ে তোলে। অনেকেই তাদের সন্তানদের এ প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বাদ দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছেন।
আমজাদুর রহমান নামের এক অভিভাবক বাংলার দর্পন কে জানান, তার দু সন্তান বর্তমানে পরশুরাম কলেজে অধ্যায়ন রত আছে। শ্রেনী কক্ষে ঠিক মতো ক্লাশ না হওয়ায় তারা কলেজে যেতে চায়না। তাছাড়া বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর মতো কোন শিক্ষকও তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। কলেজের কোন শিক্ষকও প্রাইভেট পড়াতে চান না। তাই ২৫ কিলোমিটার দূরে ফেনীতে এসে তার সন্তানেরা প্রাইভেট পড়ায় তার অর্থের অপচয় হচ্ছে। ছোট একটা চাকুরী করে এতবেশি শিক্ষা ব্যয় করে সন্তানের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় তিনি তার সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝে রয়েছে।
এছাড়া বাংলা বিষয়ে একজন সহকারী অধ্যাপক থাকলেও প্রভাষক পদ শূণ্য। ইতিহাস বিষয়ে একজন প্রভাষক থাকলেও সহকারী অধ্যাপকের পদ শূণ্য। হিসাববিজ্ঞন বিষয়ে দুইটি পদের একটি পদ শূণ্য রয়েছে।
অফিস প্রধানসহ তৃতীয় শ্রেণির ৩টি পদের সবগুলি পদই শূণ্য এবং চতুর্থ শ্রেণির ১০টি পদের মধ্যে ৫টি শূণ্য রয়েছে।
১৯৭২ সালে কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালে এবং ১৯৯৩ সালে জাতীয়করণের সময়ও কলেজের গ্রন্থাগারিক, সহকারী গ্রন্থাগারিক, প্রদর্শক, কম্পিউটার অপারেটর ও ল্যাবরেটরী সহায়ক কর্মচারীর পদই সৃষ্টি করা হয়নি।
ফলে উপজেলা সদরে অবস্থিত একমাত্র সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা খুঁড়িয়ে চলতে হচ্ছে।
শিক্ষক সংকটের কারনে বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায়না। কেউ ভর্তি হলেও তাকে পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা। চলতি বছর কলেজে একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ১৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তার আগে ২০১৫ সালে একাদশ বিজ্ঞান শ্রেণিতে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাদশ শ্রেণির দুইজন শিক্ষার্থী বলেন, তাদের সচ্ছল পরিবারের বন্ধুরা প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ফেনীসহ বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েছে। পরিবারের আর্থিক দিক বিবেচনা করে তারা নিজ এলাকার কলেজে ভর্তি হয়। কলেজে শিক্ষক নেই। প্রাইভেট পড়ার জন্যও এলাকায় ভাল শিক্ষক নেই। এতে করে ভালো ফলাফল অর্জন নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু কাওছার মোহাম্মদ হারেছ জানান, বর্তমানে কলেজে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে ইংরেজি বিষয়সহ ৮টি বিষয়ে কোন শিক্ষক নেই। কলেজের শিক্ষক সল্পতার বিষয়টি কয়েক বার শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালককে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘœ ঘটার বিষয়টি মাথায় নিয়ে একজন ইংরেজী বিষয়েরসহ চারজন খন্ডকালীন শিক্ষক (অতিথি শিক্ষক) স্থানীয়ভাবে নেয়া হয়েছে। অফিসের কাজের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে একজন কম্পিউটার অপারেটর নিয়ে কোন রকুম প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।
স্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা না হলে দিন দিন প্রতিষ্ঠানটির সুনাম মুছে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *