ফেনী’ প্রতিনিধি :
ফেনীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন ও লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন।
সোমবার তারা নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন ও লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে আদালতে বক্তব্য রাখেন সিরাজ-উদ-দৌলা।
একই দিন আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে এ হত্যাকাণ্ডে জব্দকৃত আলামত উপস্থাপন করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অভিযুক্ত আসামিদের মুখ থেকে রাফি হত্যার সঙ্গে তাদের জড়িয়ে যে ৮৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তার ওপর আসামিদের নিজ নিজ বক্তব্য দিতে বলেন।
একই সঙ্গে বিচারক তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাফাই সাক্ষ্য দিতে চায় কিনা জানতে চাইলে আসামিরা তাদের কোনো সাফাই সাক্ষ্য দিবে না বলে জানিয়ে আদালতকে তাদের নিজ মুখে বক্তব্য রাখতে এবং তাদের লিখিত বক্তব্য জমা দিতে অনুমতি প্রার্থনা করেন।
বিচারক তাদের আবেদন আমলে নিয়ে বক্তব্য রাখতে বলেন।
বিচারকের আদেশের পর আসামিদের মধ্যে প্রধান আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। দুপুর দেড়টা থেকে ১৫ মিনিট এ ঘটনার সঙ্গে সিরাজ-উদ-দৌলা জড়িত নয় বলে বক্তব্য রাখেন।
পরে তিনি আদালতে প্রায় ৭ পৃষ্ঠার কম্পিউটার কম্পোজ বক্তব্য জমা দেন। পরে নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, মহিউদ্দিন শাকিল ও মোহাম্মদ শামীম নিজ মুখে বক্তব্য রেখে লিখিত বক্তব্য জমা দেন।
এর আগে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে তাদের মধ্যে ১২ আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোমবার আদালতের শুরুতেই মামলার বাদী রাফির ভাই নোমান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মো. শাহ আলমের পুনরায় জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু।
জেলা জজ আদালতের পিপি হাফেজ আহাম্মদ ও বাদীর পক্ষের আইজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, মামলার বাদী রাফির ভাই নোমান ও পিবিআইয়ের মো. শাহ আলমের পুনরায় জেরা করেছেন আসামির আইনজীবীরা। পরে আদালত আসামিদের নিজ মুখে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামিরা জড়িত কি না জানতে চাইলে তারা তাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখার প্রার্থনা করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন এবং তাদের বক্তব্য শুনেন।
এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলে আদালতে ১৬ আসামি বক্তব্য রেখেছেন বলে দাবি করেন পিপি।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।