জসীম উদ্দিন >>>
জয়নাল হাজারী তার ফেসবুক ভাষণের শুরুতেই দাগনভূঁইয়া থানা আ.লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন ও ফুলগাজী আ.লীগের সহসভাপতি মীর হোসেন চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
হাজারী বলেন ২০০১ সালে লক্ষ জনতার সভায় নেত্রী ফেনীতে বলেছিলেন হাজারী ছিল, আছে এবং থাকবে। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় যেন সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন। গত ঈদের কয়েকদিন আগে এক ব্যক্তি হাজারীকে বলেছিল ঈদ উপলক্ষে ফেনীতে অবস্থান করার জন্য। হাজারী বলেছিল নেত্রীর অনুমতি ছাড়া যাব না। লোকটি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিল আপনি মরে গেলেও লাশ যাওয়ার অনুমতিও নেত্রী দিবে না। তখন হাজারী বলেছিল তাহলে লাশ ও যাবে না সমস্যা নাই। কারণ সুভাস বসুর মৃত্যু কখন কোথায় কিভাবে হয়েছিল তাই কেউ জানে না। কিন্তু আজও সুভাস বসু ভারতের সব চাইতে জনপ্রিয় মানুষ।
হাজারী বলেন আমি কিছুটা সুভাস বোসের অনুসারী এবং তিনি সাদা পোশাক পরতেন বলেই আমিও সাদা পোশাক পছন্দ করি।
এরপর হাজারী তার ভাষণে তার জীবনের কিছু ব্যতিক্রম ঘটনার অবতারণা করেন। প্রথমেই তিনি বলেন ১৯৮৭ সালে আমার মুক্তির দাবিতে আ.লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৭দিন সংসদ অবরোধ করে রেখেছিল। আর তাতে তৎকালীন এরশাদ সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। নতুবা একটি হত্যা মামলায় হাজারীকে ফাঁসি দেয়ার সকল পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে রেখেছিল। হাজারী বলেন আমি জেলে থাকতে বাখরাবাদের একটি লোক পাইলস অপারেশনের সময় মৃত্যুবরণ করে আমাকে ঐ লোকের হত্যা মামলায় জড়িত করেছিল। সংসদ অবরোধকালে সারা পৃথিবীতে খবরটি ছড়িয়ে পরে। ইউরোপের ১৪টি দেশ আমার মুক্তির জন্য সংসদে প্রস্তাব পাস করে এবং নেত্রীর কাছে সেই সবের কপি পাঠিয়েছিলেন এবং নেত্রী আমাকে তা হস্তান্তর করেছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা কখনো ঘটে নাই। আমি কখনোই কেন্দ্রীয় নেতা ছিলাম না। তবুও ৯১সনে আমাকে দুটি সংসদীয় আসনে দল মনোনয়ন দিয়েছিল।
এইরূপ মনোনয়ন আ.লীগের ইতিহাসে কাউকে দেয়া হয় নাই। আমি ইন্টারভিউ বোর্ডে একবারও উপস্থিত হই নাই। তবুও আমাকে চারবারই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। অবশ্য সববারই নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। আমি দেশে ছিলাম না তবুও আমাকে ২০০১ সালে দল মনোনয়ন দিয়েছিল। দেশে নাই এমন কোন ব্যক্তিকে আ.লীগ কখনোই মনোনয়ন দেয় নাই। সংসদ সদস্য থাকাকালে গ্রেফতারের পর যখন মুক্তি পেয়েছি তখন দুইবারই নেত্রী আমার সংবর্ধণা সভায় প্রধান অতিথি হয়ে ফেনীতে এসেছিলেন। সর্বশেষ হাজারীকে ৪০ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করে হাজারী বলেন বিগত ১০ বছরে বা কখনো আ.লীগ সরকার কাউকে ৪০ লক্ষ টাকা অনুদান দেন নায়। এটাই ছিল সর্বোচ্চ অনুদান। এরপর হাজারী নেত্রীর হাত থেকে অনুদানের চেক গ্রহণ করার সময় যেসব কথাবার্তা হয় সেগুলো উল্লেখ করেন।
প্রায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে নেত্রী গণভবনের হলরুমে প্রবেশ করে হাজারীর দিকে আসতেই হাজারী বলেন আমাকে টাকা দিচ্ছেন নিশ্চয়ই খুশির খবর কিন্তু আমি চাই আমাকে দলের সঙ্গে যুক্ত করুন। এই সময় নেত্রী অনেকটাই উচ্চ কন্ঠে বলতে থাকেন আপনাকে দল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে কে? আপনি তো দলে আছেন, দলে ছিলেন এবং দলে থাকবেন। তিনি বলেন আপনাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে কে? নাম বলুন তাদের, আমি দলের প্রধান আমি কখনোই আপনাকে বহিষ্কার করি নাই।
তখন হাজারী বলেন অনেকেই তো এক সময় এ কথা বলেছে। নেত্রী বলেন সে সময় অনেকেই অনেক কিছু বলেছে, সেগুলো বাদ দেন। এরপর হাজারী বলেন তাহলে আমাকে দলের কোন একটি পদ-পদবী দিন। নেত্রী তখন হাসি মুখে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। এরপর তিনি বলেন একটি ব্যাংক আমার মামলা শেষ হয়ে গেছে তবুও টাকা দিচ্ছে না। নেত্রী বলেন বলে দিব। এই দিন এসময়ে নেত্রীকে খুবই হাসি-খুশি মনে হচ্ছিল। এই দুর্লভ মূহুর্তে সেখানে বাহাউদ্দিন নাসিম, এনামুল হক শামীম, নানক, আজম, রেলমন্ত্রীসহ আরো প্রায় ২০-৩০জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সকল নেতাই তখন খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েন।
হাজারীর সঙ্গে নেত্রীর খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ কর্থাবার্তা খানিকটা বিস্ময় প্রকাশ করেন। হাজারী এর প্রতিক্রিয়ায় তার ভাষণে বলেন টাকা পাওয়াটা অনেক বেশি কিছু পাওয়া নয়, তবে নেত্রীর কাছ থেকে পাওয়া অনেক বড় পাওয়া, এটা একটা মহৎ স্মীকৃতি। হাজারী বলেন নেত্রী আমাকে মনে রেখেছে স্মীকৃতি দিয়েছে মৃত্যুর আগে এটাই খুবই বড় পাওয়া। তবে তার চাইতেও লক্ষগুণ বেশি পেয়েছি যখন নেত্রী বলেছে আমি আপনাকে কখনোই দল থেকে বহিষ্কার করি নাই। নেত্রীর মুখ থেকে এ কথা শুনার পর হাজারী খানিকটা অভিভুত হয়ে পড়েন। ঠিক এইরূপ কথা নেত্রী বলবেন তা হাজারী একেবারেই চিন্তা করতে পারেননি। সুতরাং হাজারী বলেন এরপর থেকে আমার জীবনের নবজাগরণের সুত্রপাত হয়েছে এবং অতি সহজেই পথ চলা শুরু হবে।
ফেনীর এক সেন্ডিকেট নেতা বলেছে- আমরা আগেই বলেছিলাম হাজারীর ক্যান্সার হয়েছে কিছুদিনের মধ্যে মারা যাবে। আর সেজন্যই চিকিৎসা খরচের জন্য নেত্রী ৪০ লাখ টাকা হাজারীকে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাজারীর বলেন এখনো আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে নাই। তবে আজ নাই কাল তো হতেই পারে। তিনি বলেন তবে আমার বাম দিকের রক্তনালীতে সমস্যা আছে, যাতে মাথার দিকে রক্ত চলাচল বিঘি্নত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুর ডাক্তারেরা আরো পরীক্ষ-নিরীক্ষার কথা বলেছে। তবে এর চিকিৎসার সুইজারল্যান্ডের রাজধানীতে ভাল হয়। বাংলাদেশেও রিং লাগানোর মাধ্যমে এর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তবে এখনো এটাকে জুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
এবার অন্য প্রসঙ্গে এসে হাজারী বলেন- অনেকেই সম্রাটকে দক্ষিণের মেয়র হিসেবে দেখতে চায়। তিনি বলেন এ ব্যাপারে সম্রাট নিজে যদি কথা বলে কেবল তখনি আমি আমার মতামত ব্যক্ত করবো।
জহির রায়হান হলের ব্যাপারে তিনি বলেন এখানে বছরে একটি চক্র কয়েকবার মেলা বসিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। তারাই এটাকে ভাঙ্গার পর নতুন করে বানাতে দিচ্ছে না। হাজারী জেলা চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মেদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন কারো কথা না শুনে হলটি পূর্ণ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
সাখাওয়াতের উপর হামলার আসামিরা গ্রেফতার হয়েছে এবং তাদের আদালতে জামিন চাওয়া হয়েছে। আদালত হাসপাতালে তার কি হয়েছিল তা জানতে চেয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে কিছুই হয় নাই। এ প্রসঙ্গে হাজারী বলেন যদি কিছুই না হয় তবে তাকে অচেতন অবস্থায় ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন কেন? ঢাকায় ২৮ দিন চিকিৎসার পর এখনো আহত অবস্থায় ঢাকাতেই অবস্থান করছে কেন? এই অমানুবিক আচরণের জন্য হাজারী ডাক্তারদের বলেন আপনাদের সরম থাক উচিত জেলখানায় সাখাওয়াতের সঙ্গে অসৎ আচারণ করার জন্য জেলের কিছু কর্মকর্তা শাস্তির আওতায় এসেছে। এখন পুরোপুরি আগের অবস্থা নাই। সুতরাং কারো কথায় বিভ্রান্ত হয়ে কিছু করলে আপনারাও রেহাই পাবেন বলে মনে হয় না। কারো কথায় নয়, নিজের বিবেককে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিন।
সব শেষে হাজারী বলেন যারা ভাবছেন এখনি ফেনীর পরিস্থিতির আমুল পরিবর্তন হবে তারা ভুল করছেন। শুধুমাত্র গণজাগরণের মাধ্যমেই আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে। এখন আপাতত গণজাগরণের সম্ভাবনা নাই কারণে সেন্ডিকেট রাজত্বের খুবই একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। অবশ্য কিছুটা পরিবর্তন তো হবেই। হাজারী বলেন জানুয়ারী থেকে নতুন দিগন্তের আভাস পাওয়া যাবে। তিনি বলেন চিকিৎসা শেষে জানুয়ারির দিকেই আমিও নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা কথা ভাবছি। আপনারা দোয়া করুন এবং মানুসিকভাবে আরো শক্তিশালী চিন্তাভাবনা করুন।
এর আগে হাজারী হঠাৎ করে কে বা কারা সামাজি যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিয়ের একটি খবর প্রচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন এটা হিনমনা কিছু লোকের মিথ্যা প্রচার। তিনি বলেন ফেসবুক আইডির ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য এসব মিথ্যা ও চাঞ্চল্যকর খবর প্রচার করে থাকে। এটা অন্যায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করা খুবই জরুরি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
সব শেষে একটি কবিতা দিয়ে হাজারী কথা শেষ করেন।
কবিতার কথাগুলো-
কালের ঘন্টার ধ্বনি শুনিতে কি পাও
কালের চক্র ঘুড়িতেছে অবিরত।
আজ যাহারা কালের শীর্ষে
কাল তাহারা পদানত।
”জয় বাংলা