নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সংসদ নির্বাচন বানচালের উদ্দেশে বিস্ফোরক নিয়ে গোপন বৈঠকের সময় আটক জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের নামে করা মামলার ( মামলা নং ১২. তারিখ ১৪/১২/২০১৮)চার্জশিট দেয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা ও উপজেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার স্বাক্ষ্য প্রমাণ থাকার পরও তাদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছে পুলিশ। এ জামায়াত নেতাদের নাম এজাহারেও উল্লেখ ছিল। নাশকতার মামলার আসামি ফেনী জেলা জামায়াতের আমির একেএম সামছুদ্দিন, ছাগলনাইয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মজিবুর রহমান, পৌর জামায়াতের আমির পেয়ার আহমদ এবং জামায়াত নেতা ও সিএফসি রেস্টুরেন্টের মালিক খোরশেদ আলমকে বাদ দিয়ে ফেনীর চারজন পেশাদার সাংবাদিকের নাম অর্ন্তভুক্ত করে পুলিশ গোপনে গত ৭ মে আদালতে চার্জশিট (নং ৮৫) দিয়েছে।
নুসরাত হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং পুলিশের অবহেলার বিষয়ে সাংবাদিকরা টানা প্রতিবেদন করলে ক্ষেপে যান এসপি জাহাঙ্গীর।
এমামলার বিষয়ে ফেনী জজ কোর্টের আইনজীবি জহির উদ্দিন মামুন প্রতিবেদককে বলেন, ‘ পুলিশ প্রকৃত অপরাধিদের আড়াল করে বেআইনি লাভবান হয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৎকালিন এসপির নির্দেশে ( জাহাঙ্গীর সরকার) সাংবাদিকদের হয়রানির জন্য এ মামলায় আসামি করেছে। যা অত্যন্ত নিন্দিনিয়। কারন তখনকার ওসি ( মঞ্জুরুল মোর্শেদ) এবং এসপি ( জাহাঙ্গীর সরকার) দুজনেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। তাদের সঙ্গে সেখানে শিবির কানেকশান ছিল। এখন বিজ্ঞ আদালত ইচ্ছা করলে ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ পুলিশ রিপোর্ট প্রত্যাখানও করতে পারে। ’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছাগলনাইয়া শহরের জামায়াতের আস্তানা ক্ষ্যত সিএফসি রেস্টুরেন্টে গোপন বৈঠকের সময় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে জামায়াত শিবিরের ১৭ জনকে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ আটক করা হয়। ওই রাতেই ছাগলনাইয়া থানার এসআই মো: শহীদুল ইসলাম বাদি হয়ে নাশকতার অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামী করা হয়।
বাদি মামলার এজাহারে বলেছেন, ‘ঘটনার পর গ্রেফতার হওয়া আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়- ‘ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামী নেতা একেএম সামছুদ্দিন, ছাগলনাইয়া উপজেলার জামায়াতে ইসলামী নেতা মো: মজিবুর রহমান, পেয়ার আহমেদ ও খোরশেদদের নির্দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে নাশকতা ও অন্তর্ঘাতিমূলক কর্মকান্ড করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা করার জন্য লিফলেট ও বারুদ সহ উক্ত স্থানে সমবেত হইয়াছে।’
অথচ ৫ মাস তদন্তের পর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এস আই খোরশেদ চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন, ‘ এ কে এম সামছুদ্দিন, মোঃ মজিবুর রহমান, পেয়ার আহমদ, খোরশেদ রা মামলার ঘটনার সহিত জড়িত থাকার বিষয়ে স্বাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যাইলেও তাহারা পলাতক থাকায় এবং তাহাদের সঠিক নাম ঠিকানা না থাকায় তাহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করা সম্ভব হইতেছেনা।’
জানা যায়, একে এম সামছুদ্দিন ও মজিবুর রহমান ফেনী শহরে এবং পেয়ার আহমদ ও খোরশেদ ছাগলনাইয়া শহরে নিজ বাসায় বসবাস করেন। তারা একাধিক মামলার আসামী হওয়ায় আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছেন। এমনকি তারা নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করছেন। তারা সবাই ফেনীর স্থানীয় বাসিন্দা।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের স্টাফ করেসপনডেন্ট সোলেয়মান হাজারি ডালিম বলেন, ‘ এসপি জাহাঙ্গীর এবং ছাগলনাইয়া থানার ওসি তদন্ত সুদ্বীপ রায়ের নির্দেশে তদন্তকারি কর্মকর্তা নাশকতার মামলায় জামায়াত নেতাদের বাদ দিয়ে আমিসহ দৈনিক ফেনীর সময় ও সাপ্তাহিক আলোকিত ফেনী সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, দৈনিক অধিকার প্রতিনিধি ও ফেনী রিপোর্ট সম্পাদক এসএম ইউসুফ আলী, দৈনিক সমায়ের আলো প্রতিনিধি ও স্টার লাইনের স্টাফ রিপোর্টার মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারিকে আসামি করেছে। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রনোদিত।
ছাগলনাইয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য ও আওয়ামীলীগের সভাপতি সামছুদ্দিন বুলু মজুমদার জামায়াত নেতাদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ পুলিশ টাকা খেয়ে জামায়াতকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কারন ওই জামায়াত নেতারা সংসদ নির্বাচনের আগে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। এটা ফেনীর সবাই জানেন। ’
মামলার আসামি জামায়াত নেতা ও ঘটনাস্থল সিএফসি রেস্টুরেন্টের মালিক খোরশেদ আলম পুলিশের প্রতি সন্তোস প্রকাশ করে বলেন, ‘ আলহামদুল্লিাহ । পুলিশ আমাদের সবাইকে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছেন। বড় ধরনের ঝামেলা থেকে মুক্ত হলাম।’
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই খোরশেদ আলম বলেন, ‘ নতুন করে অর্ন্তভুক্ত এ চারজন যে পেশাদার সাংবাদিক তা আমার জানা ছিলনা। তদন্ত স্যারের (সুদ্বীপ রায়) নির্দেশে তাদের আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া জামায়াত নেতাদের সঠিক পরিচয় না পাওয়ায় তাদের চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ’
তবে ওসি তদন্ত সুদ্বীপ রায় বলেছেন , ‘ জামায়াত নেতাদের নাম এজাহারে থাকলেও পুলিশ তাদের বাসাবাড়ি এবংকী গ্রামের প্রকৃত কোন ঠিকানা তদন্ত কর্মকর্তা খুঁজে পাননি। তাই তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে অনৈতিক কোন সুবিধা নেয়া হয়নি। ওই চার সাংবাদিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তাদের নাম অর্ন্তভুক্ত হয়েছে।’
মামলার বাদী এস আই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ জামায়াত নেতারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই আমি তাদের নাম উল্লেখ করে আসামি করেছি। যারা ঘটনাস্থল থেকে আটক হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্যের ভিত্তিতে জামায়াত নেতাদের আসামি করা হয়েছে। পরবর্তীতে ওসি তদন্ত স্যার (সুদ্বীপ রায়) এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা কি করেছে তা জানিনা। কারন এ মামলার বিষয়ে পরিশ্রম করেছি আমি কিন্তু চার্জশিট দেয়ার আগে আমার কোন মতামত নেয়া হয়নি।’
সিনিয়র সহকারি পুলিশ সপুার ( ছাগলনাইয়া-পরশুরাম সার্কেল) নিশান চাকমার কাছে এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আপসোস করে বলেন, ‘ এ মামলার এম ই ( স্বাক্ষ্য স্বারকলিপি) পর্যন্ত দাখিল করেনি। ওসি নিজে সরাসরি এসপি স্যারের সঙ্গে যোাগাযোগ করেছে। এসপির স্বাক্ষর নিয়ে চার্জশিট দাখিল করেছে। এগুলো বলে এখন আর লাভ নেই। ’