জাহাঙ্গীর ফিরোজ >>>
সাদা কাপড় পরায়ে, কফিনে শোয়ায়ে, রেখেছে আমায় ইস্ট লন্ডন মসজিদ মর্গে l
বাদ জুমা জানাজা হবে ঘোষণা দিল সবাইকে l
অপেক্ষা আর সইতে পারিনা, কখন ফিরে যাবো স্বদেশে,
যে দেশে জন্মেছি আমি, অন্তিম শয্যা হবে সে দেশের মাটিতে l
যে মাটিতে ঘুমিয়ে আছে আমার বাবা-মা ও আপনজন,
সে মাটির টানে ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়েছে মনl
ভেবে ভেবে কেটেছিল কত দিন রজনী জন্মভূমির তরে,
মা ও মাটির টানে, শিকড়ের কাছে ফিরে যেতে প্রবাস জীবন ছেড়ে l
এ জীবনে হলো না ছাড়া প্রবাস জীবন,
কেবল শেষ নিঃশ্বাস ফেলে হলো সে আশা পূরণ l
প্রবাস জীবনে দেখেছি কত বিলাস ও আনন্দ-উল্লাস,
তবু কেন বুক চীরে বের হয় দীর্ঘশ্বাস?
অবশেষে দেখি সবই তো শূন্য মিছে,
এই তো জীবন ! সব কিছু পড়ে রবে পিছে।
জানাজা শেষে হলের ভিতর রেখেছে কফিন, খুলে দিয়ে মুখের কাপড় l
স্বজন আর শুভকাঙ্খীরা শেষ দেখা দেখে যায় পর পর l
ভিড়ের চাপে মোর দু’মানিক পায় না খুঁজে পথ আর,
অসহায় বালকের মত পথ দিতে সবাইকে অনুরোধ করে বার বার l
ভিড় ঠেলে এসে কফিন জড়ায়ে ধরে কাঁদে দু’মানিক।
কোথায় যাও বাবা? হৃদয়ের
টুকরাদের ফেলে, তাকাও না, ক্ষনিক।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে রোদন করে পায় না কোনো সাড়া,
বাবা, বাবা বলে কে ডাকবে আর হলাম বাবা হারা l
লাল সবুজের পতাকাবাহী বিমান আকাশ পথে উড়ে যাবে আমার কফিন নিয়ে,
গর্বে আমার বুক ভরে যাবে জন্মভূমির আকাশসীমায় গিয়ে l
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা অনিন্দ্য সুন্দর জন্মভূমি তুমি,
আকাশ থেকে শেষ বারের মতো দু’নয়ন ভরে দেখে নেবো আমি l
কান্নার রোল শুনতে পাব, বিমান ছুঁলে মাটি l
ধৈর্য আর ধরে না হায়,
মায়ের পাশে কখন যে শায়িত হবো চির নিদ্রায় l
মা আমার ঘুমিয়ে আছে তরুচ্ছায়া তলে,
পাখিরা সব সুর তুলে কত যে মনের কথা বলে l
সন্ধ্যা বেলায় জোনাকিরা জ্বালিয়ে দেয় আলো,
এদিক ওদিক উড়ে বেড়ায় কত যেন বাসে ভাল l
এ ভুবন থেকে বিদায়ের কালে দেখা হয়নি মায়ের প্রবাসী ছেলের সনে।
সে ব্যথা মোর হৃদয়ের গহীনে জেগে উঠত ক্ষণে ক্ষণে।
আজ এতদিন পরে ঘুমাতে যাব পরম শান্তিতে।
মাগো তোমার পাশে, মাতৃভূমির পবিত্র মাটিতে।
ঐ যে দেখা যায় মসজিদ, সমাধি হতে অনতিদূর,
শুনতে পাব মুয়াজ্জিনের আজানের সুমধুর সুর।