শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা ব্যুরো চীফ: সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত পাঠক নন্দিত বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিন হত্যা মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার বাদি নিহতের ভাই স.ম নাসিরউদ্দিনের দায়েরকৃত রিট পিটিশনের শুনানী শেষে বুধবার হাইকার্টোর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুসজামানের সমন্বয় গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন রাতে দৈনিক পত্রদূত অফিসে কর্মরত অবস্থায় দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে নিহত হন পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য স. ম আলাউদ্দিন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই স.ম নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা খুনিদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পর পুলিশ হত্যাকাণ্ড ব্যবহৃত কাটা রাইফেল সহ শহরের সুলতানপুরের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আব্দুল ওহাবের ছেলে যুবলীগ কর্মী সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। সে আদালতে ১৬৪ ধরায় স্বীকারাক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং এর সঙ্গে জড়িত হিসাবে সাতক্ষীরার চিহ্নিত গডফাদার খলিলুল্লাহ ঝড়ু, তার ভাই সন্রাসী সাইফুল্লাহ কিসলু (বর্তমান মৃত), তার আর এক ভাই সন্রাসী মোমিন উল্লাহ মোহন, আর এক গড়ফাদার আলিপুরের আব্দুস সবুর, কামালনগরের আবুল কালাম, সুলতানপুরের এসকেন্দার মির্জা, কিসলুর ম্যানেজার আতিয়ার রহমান, প্রাণসায়েরের সফিউর রহমান, নগরঘাটার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের নাম প্রকাশ করে। প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ১০ম অপরাধ ও তদন্ত শাখার (সিআইডি) সহকারি পুলিশ সুপার খন্দকার মো. ইকবাল উপরিউক্ত ব্যক্তিদের আসামি শ্রেণিভুক্ত করে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদালত সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালত উপরিউক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটির অভিযোগ গঠনের পর ঝড়ু, সবুরসহ কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে কোয়াশমেন্টের আবেদন করলে মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ডিভিশন এবং অ্যাপলিট ডিভিশনের আদেশ দীর্ঘদিন মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। একপর্যায়ে অ্যাপলিট ডিভিশন বিষয়টির নিষ্পত্তি করে সকল আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি দ্রুত বিচারের নির্দেশ দেন। এ পর্যায়ে মামলাটি সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে পুনরায় উক্ত সবুর, ঝড়ুসহ কয়েকজন আসামি সাতক্ষীরা জেলার পরিবর্তে মামলাটি অন্য কোন জেলায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলে বিচার কার্যক্রম আবারো স্হগিত হয়ে যায়। হাইকোর্ট ডিভিশন আসামিদের আবেদন না’মঞ্জুর করে আদেশ দিলে আসামিরা ঐ আদেশের অ্যাপলিট ডিভিশনে যায়। সেখানে শুনানির পর আসামিদের আবেদন না’মঞ্জুর হয়। সে আদেশ নিন্ম আদালতে আসার পর মূলত ২০১২ সালে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ইতিমধ্যে মামলাটির ৩৮ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ইতিমধ্যে ২২ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামি রবিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র সহকারি পুলিশ সুপার সিএ হালিমের সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়। তবে নিহতের স্ত্রী লুৎফুনছা বেগম আদালতে যে সাক্ষী দিয়েছেন তা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি দাবি করে বাদি সাতক্ষীরার বর্তমান জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারের কাছে ন্যায় বিচার পাবেন না বলে আশঙ্কা করেছেন।
তবে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অভিযোগ করে বলেন, আলাউদ্দিন হত্যা মামলাটি যথাযথভাব সম্পন্ন না করতে একটি মহল যোগসাজস করে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড.ওসমান গনিকে গত ২৪ অক্টোবর অপসারন করায়। ২৮ অক্টোবর দায়িত্ব দেওয়া হয় অতিরিক্ত পিপি অ্যাড.তপন কুমার দাসকে।
বাদি পক্ষ রিট পিটিশনটির শুনানী করেন অ্যাড.তহিদুল ইসলাম ও অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এম কে আব্দুর রহমান।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড.তপন কুমার দাস জানান, বাদি পক্ষের রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের তিন মাসের স্হগিতাদেশ সংক্রান্ত আদেশটি রবিবার আদালতে উপস্থাপন করা হবে।