মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ বিরোধী কাজে জড়িয়ে স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত ব্যারিস্টার মইনুল

নিউজ ডেস্ক: বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্যবহুল বক্তব্য দিয়ে ভক্তকুল বাড়ালেও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। নিজেকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষ দাবি করলেও তার সকল কাজকর্ম ছিল স্বাধীনতার বিপক্ষীয় শক্তিদের জন্য। চরম সত্য হলো, মইনুল হোসেন মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় অবস্থান করে পাকিস্তানি দালালদের সহযোগিতা করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ব্যারিস্টার মইনুল বিভিন্ন সময়ে সুবিধা আদায় করতে সরকার বিরোধী কাজকর্মে জড়িত ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে যারা সরাসরি কাজ করেছেন সেই দালালদের অন্যতম ছিলেন খোন্দকার আব্দুল হামিদ। আব্দুল হামিদের সাথে বিশেষ সখ্যতা ছিল ব্যারিস্টার মইনুলের। এই খোন্দকার আব্দুল হামিদের ইঙ্গিতে পাকবাহিনী ইত্তেফাক অফিস থেকে সাংবাদিক খোন্দকার আবু তালিবকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে। তাদের যোগসাজোসে হত্যা করা হয় সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকেও।

জানা যায়, ১৯৬৯ সালে মানিক মিয়ার মৃত্যুর পরে স্বাধীনতার পক্ষে সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ নামে কলাম লিখতে শুরু করেন। এই কলামে তিনি তৎকালীন পাকিস্তানি দুঃশাসনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করতে নিজের লেখনিকে ব্যবহার করেন সিরাজুদ্দিন। তার লেখা কলামগুলো সে সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সে সময়ে ইত্তেফাকে চাকরি করতেন জামায়াতে ইসলামির ঘোর সমর্থক খোন্দকার আব্দুল হামিদ। আব্দুল হামিদ মনে-প্রাণে ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী। আব্দুল হামিদ ছিলেন মইনুল হোসেনের আত্মীয়। সিরাজুদ্দিন হোসেনের অনুপস্থিতিতে ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ কলামটি মইনুল হোসেনের মারফতে খোন্দকার আব্দুল হামিদ হাতিয়ে নেন। তিনি সেই থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে লিখতে থাকেন। পরবর্তীতে মইনুল হোসেন তাকে ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ কলামটি লেখার আর সুযোগ দেননি। ব্যারিস্টার মইনুলের সহায়তায় পাকিস্তানের দালাল খোন্দকার আব্দুল হামিদ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নিয়মিতভাবে কলাম লিখতে থাকেন। হামিদ সেখানে পাকিস্তানি মতাদর্শই প্রকাশ অব্যাহত রাখেন। হামিদ তখন কুখ্যাত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা রাও ফরমান আলীর খুব ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন। এদিকে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মইনুল। ব্যারিস্টার মইনুলদের মত দেশবিরোধী শক্তিদের সহায়তায় দেশে তখন পাকবাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালায়, লুটপাট করে। ডিসেম্বর মাসে চামেলী বাগের বাসা থেকে সিরাজুদ্দিন হোসেনকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনীর দোসররা। পরবর্তীতে তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলে। সেই হত্যাকাণ্ডের সাথেও ব্যারিস্টার মইনুলের যোগসূত্রতার বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া ১৯৭৪ সালে বাসন্তী নামে একজন পাগল মহিলাকে জাল পরিয়ে ইত্তেফাক পত্রিকায় একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। এই ছবির মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা হয়। এবং পঁচাত্তরের ঘাতকদের প্রোপাগাণ্ডা হিসেবে এই ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই বাসন্তীকে জাল পরানোর পরিকল্পনাটি ছিল মইনুল হোসেনের বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭৫ সালের পনেরো আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের দালালরা ক্ষমতায় আসে। মইনুল হোসেন তখন এই ঘাতকদের সহযোগিতা করেন। খুনি খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করেন ব্যারিস্টার মইনুল।

ব্যারিস্টার মইনুলের বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, নিজের পিতা তোফাজ্জল হোসেনের মতাদর্শ নয়, জামায়াতপন্থী খোন্দকার আব্দুল হামিদের মতাদর্শই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সারাজীবন ধরেই বহন করে চলেছেন। কয়েক বছর আগে জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে স্বীকার করেন, তার সঙ্গে এই পাকিস্তানি ঘাতক সংগঠনের সম্পর্ক বহুদিনের। নির্বাচনের পূর্বে ব্যারিস্টার মইনুলের হঠাৎ করে রাজনীতিতে সরব হয়ে ওঠা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ব্যারিস্টার মইনুল এবার কোন পক্ষের হয়ে কাজ করবেন সেটি নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতির স্বার্থে ব্যারিস্টার মইনুলকে বর্জন করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *