ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু : তদন্ত কমিটি 

ফেনী প্রতিনিধি : ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যুর নিয়ে তোলপাড় চলছে। মামলা হওয়ার আশংকায় প্রসূতির কাগজপত্র চিনিয়ে নিয়েছে হপাতাল কতৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আশ্বাসের ৭২ ঘন্টা পরও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কতৃক্ষ। ২৪ঘন্টা পর হাসপাতাল থেকে প্রসূতির মরদেহ নেন তার স্বজনেরা। নবজাতক শিশুটিও সংকটাপন্ন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রসূতির স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ফেনী শহরের ট্রাংক রোড়ের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী বিবি আয়েশা (২২) ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: নিলুফা ইয়াছমিনের পরামর্শ অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি হয়। বেলা আড়াইটার দিকে ডা. ডনলুফা তাকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে প্রসূতির একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। প্রসূতির মামি ফেরদৌস আরা জানান, নবজাতক শিশুটির অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে শহরের অন্যএশটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়। অপরদিকে প্রসূতির শারিরিক অবস্থারও উন্নতি না দেখে বারবার স্বজনরা কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানালেও তারা তেমন কর্ণপাত করেননি। অপারেশনের পর ডা.নিলুফাও তড়ি গড়িকরে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিবি আয়েশা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী ও স্বজনরা হাসপাতালে ভীড় জমাতে থাকে। তাদের সামনে নিহতের ঝা মনি বেগম অভিযোগ করেন, চিকিৎসা সেবায় অবহেলায় বিবি আয়েশার মৃত্যু হয়েছে। টাকার জন্য ডা: নিলুফা ইয়াছমিন নিদিষ্ঠি সময়ের পূর্বেই সিজার করার কারনে এ দূরর্ঘটনা ঘটেছে। বার বার জানানো হলেও কতৃপক্ষ কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখান নি। কর্তব্যরত চিকিৎসকরাও প্রসূতির প্রকৃত অবস্থা স্বজনদের জানান নি। এক পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক বহিরাগত হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে রোগীর শোকাহত স্বজনদের এ ব্যাপারে “বাড়াবাড়ি” না করতে হুমকি ধমকি দেয়।

ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এডভোকেট আক্রামুজ্জামান এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দফায় দফায় বৈঠক শেষে নিহতের মরদেহ স্বজনদের বাড়ি নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে শহরতলীর ফতেহপুরে নিজবাড়ির সামনে জানাযা শেষে তার দাফন হয়। এর পর রাতে ডায়াবেটিক হাসপাতালের লোকজন নিহত মামির বাসা দফায় দফায় অভিজান ছালিয়ে নিহতের চিকিৎসা পত্রের পাইল পত্র চিনিয়ে নেয়।

নিহতের বড় ভাই ফয়েজ আহমদ জানান, আয়েশার ৫ বছর বয়সী শিশু সন্তান জানে না তার মা না ফেরার দেশে চলে গেছেন। নবজাতক শিশুটিকেও আশংকাজনক অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকালে ফেনী থেকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।

ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আশিকুল ইসলাম মহিম জানান, আয়েশার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তিনি ধারনা করেন, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে ডা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, প্রাইভেট রোগী হিসেবে তিনি ডায়াবেটিস হাসপাতালে এসে সিজার করেছেন। কার অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপারে ডায়াবেটিস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সরকারি হাসপাতালের বদলে প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার করানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমার প্রাইভেট রোগী ছিল।

এ‌দি‌কে বিষয়‌টি জে‌নে জেলা সি‌ভিল সার্জন ডা: হাসান শাহ‌রিয়ার ক‌বির ও অ‌তি‌রিক্ত জেলা ম্যা‌জি‌স্ট্রেট পি কে এম এনামুল ক‌রিম বৃহস্প‌তিবার বিকা‌লে হাসপাতাল প‌রিদর্শন ক‌রেন । এ বিষ‌য়ে লি‌খিত প্রতি‌বেদন দেয়ার জন্য হাসপাতাল কতৃপক্ষ‌কে তারা নি‌র্দেশ দেন ।

জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান জানান এ বিষয়ে ডায়াবেটিক সমিতির কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *