৯ দফার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়েছে

প্রতিবেদক :

বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া আন্দোলনের ৯ দফা দাবির বেশিরভাই ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে সরকার। বরং এর সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত আরো অনেক বিষয় যোগ করে সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব বিষয় ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হয় রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিতে রাজপথে নামে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ইন্টানেটের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ঘুরতে থাকে। কেউ কেউ লিফলেট ছাপিয়েও বিতরণ করেন। তাদের দাবিগুলো ছিল :

 

১. বেপরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।
পদক্ষেপ : দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়া ওই বাসের চালক, সহকারী ও মালিকসহ ইতোমধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু সঙ্গে অপরাধজনিত হত্যার ধারাও যুক্ত করা হয়েছে যাতে সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করা যায়। এখন বিচার প্রক্রিয়াটি আদালতের ওপর নির্ভর করছে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য অবহেলাকারী চালকের শাস্তির মাত্রা বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইন পাসের প্রক্রিয়াতেও গতি এসেছে। আগামীকাল সোমবার মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে এ আইনের খসড়া উঠবে বলে জানা গেছে।
নৌপরিবহনমন্ত্রীর ২৯ জুলাই দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
পদক্ষেপ : ওই দুর্ঘটনার পর ৩১ জুলাই নিজের ‘অনাকাক্সিক্ষত আচরণের জন্য’ দুঃখ প্রকাশ করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তার ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি এবং ওই দিন রাতে নিহত দিয়া খানম মিমের বাসায় গিয়ে পরিবারটিকে সান্ত্বনা দেন।
শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএসে ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে।
পদক্ষেপ : গত ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন দুর্ঘটনায় নিহত দিয়া ও করিমের স্বজনরা। ওই সাক্ষাতে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের সামনে আন্ডারপাস অথবা ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার দিতে হবে।
পদক্ষেপ : শুধু গতিরোধকই নয়, সব স্কুলের সামনে গতিরোধক নির্মাণের পাশাপাশি বিশেষ প্লাকার্ডযুক্ত বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিয়া ও করিমের পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী গত ২ আগস্ট এ নির্দেশ দেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, কোনো স্কুল-কলেজের পাশে রাস্তা থাকলে সেখানে বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
পদক্ষেপ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিমের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দেন। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাসও দেন তিনি। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই ব্যয়ভারও বহন করছে সরকার।
শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে।
পদক্ষেপ : শিক্ষার্থীদের এ দাবিটি বাস্তবায়নের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
পদক্ষেপ : শিক্ষার্থীদের এ দাবিটিও বাস্তবায়নের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে সরকার। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজকে ৫ বাস দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভ‚ঁইয়া বাসগুলো ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল ও কলেজের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং লজিস্টিক এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সরোয়ার হাসানের কাছে বাসগুলো হস্তান্তর করেন। শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে স্কুলে যাতায়াত করতে পারে সে জন্য বাস দেয়া হয়।
ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না।
পদক্ষেপ : দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া আজ রবিবার থেকে পুলিশ সপ্তাহ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তারা ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।
পদেক্ষেপ : বাসে অতিরিক্ত যাত্রী না নেয়ার পক্ষে একমত পোষণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সিটিং সার্ভিসের ক্ষেত্রে এটি আইনসম্মতও নয়। এ বিষয়ে কঠোর হতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে বাস্তবতার নিরিখে এ আইনটির যথাযথ প্রয়োগ কঠিন। তাই এ বিষয়ে যাত্রীদের সচেতনতাও জরুরি বলে মনে করছে সরকার।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন ছাড়াও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আরো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে জাবালে নূরের রুট পারমিট বাতিল, মহাসড়কগুলোতে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ, বিভিন্ন স্কুল-কলেজকে পরিবহন সহায়তা দেয়া, ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো, ফিটনেস ও লাইসেন্স বিষয়ে কড়াকড়ি ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *