জেড. এ. মাসুদঃ খাগড়াছড়ির আলুটিলায় গতকাল (শুক্রবার) ট্রাক চাপায় মাও ছেলেসহ ৮ জন নিহত ও ৯ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, মহালছড়ি উপজেলার চুংড়াছড়ির মংপ্রু মারমার স্ত্রী নাইম্রা মারমা (৪০) ও তার ছেলে চিংলা মারমা (১৩), একই এলাকার চাইলাপ্রু মারমার ছেলে উচিংনু মারমা (১৫), মংমং মারমার শিশু কন্যা মাথিং মারমা (৫), চাইহ্লা মারমার শিশু কন্যা টুনটুনি মারমা (১০), মংক্ররী মারমার ছেলে অংক্যচিং মারমা (১২) ও রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের নাকপা এলাকার আক্যসুই মারমার ছেলে সাথোইপ্রু মারমা (১৫)।
জানা যায়, গতকাল (শুক্রবার) আলুটিলাস্থ ধাতুচৈত্র বৌদ্ধ বিহারে প্রধান ভান্তের দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান ছিল। এখানে বহু পূণ্যার্থীর মিলনমেলা ঘটে। এ নিয়ে রাস্তার দু’ পাশে মেলা বসে। ঢাকা থেকে পাথর বোঝাই (চট্রমেট্রো ১১-৩৮০০) ট্রাকটি দোকানে পিঠা খাওয়ার জন্য জড়ো হওয়া লোকদের চাপা দেয়।্ এতে ৮ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ববি মারমা সহ অন্য একজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানান সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নয়নময় ত্রিপুরা । তিনি আরো জানান, তাদের অবস্থা এত বেশি খারাপ যে তাদের বাইরে কোথ্ওা পাঠানো যা”্ছে না। পুলিশ ঘাতক ট্রাকটি ও চালক (হেলপার) সুমনকে আটক করেছে। সুমনের বয়স ১৭ বছর।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে খাগড়ছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও পৌর মেয়র মো. রফিকুল আলম হাসপাতালে আহত ও নিহতদের দেখতে যান । ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ নিয়ে আসে ফায়ার সার্ভিস ্ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। দুঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আত্নীয়-স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় জমান । অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ।
খাগড়াছড়ি হাসপাতালের চিকিৎসাধীনরা হলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি এলাকার মংসাউ মারমা’র স্ত্রী ম্রানাইউ মারমা (২৫), সদর উপজেলার মাইসছড়ি এলাকার সাজাউ মারমা’র ছেলে জনি মারমা (২৮), মাটিরাঙা উপজেলার আলুটিলা এলাকার ইন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে সুকেন ত্রিপুরা (২৮), মহালছড়ি উপজেলার চেহাইউ মারমা’র মেয়ে ববি মারমা (৩০), চুংড়াছড়ি এলাকার মংমং মারমার স্ত্রী উমেচিং মারমা, সদর উপজেলার খাগড়াপুর এলাকার তরুণ ত্রিপুরার স্ত্রী পিপি রাণী ত্রিপুরা (২৪), রাঙামাটি জেলার সাজেক’র দারিপাড়া এলাকার জনি চাকমার ছেলে শান্তি রঞ্জন চাকমা (৪৫), মহালছড়ি উপজেলার চিংলামং মারমা’র ছেলে চিংক্যহ্লা মারমা (৮) একই এলাকার মংমং মারমা’র মেয়ে চিং¤্রাউ মারমা (১৫) ও পাইসাউ মারমার ছেলে রনি মারমা (৩০)।
সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, লাশগুলো ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে রয়েছে । খাগড়ছড়ি থানার ওসি তারেক মোহাম্মাদ হান্নান জানান, হেলপার বেপোরোয়াভাবে গাড়িটি চালাচ্ছিল। চালক (হেলপার) সুমনকে আমরা আটক করেছি। তার বাড়ি খাগড়ছড়ির দিঘিনালা উপজেলার হাজাছড়া গ্রামে।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার আলুটিলার ধাতুচৈত্য বৌদ্ধ বিহারে জেলা সদরের খাগড়াছড়ি সদরের জনবল বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ চন্দ্রমনি মহাস্থবিরের দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানের ব্যাপক আয়োজন ছিল্। এই পূণ্যানুষ্ঠানে হাজারো বৌদ্ধ ধর্মপ্রিয় নারী-পুরুষ হাজির হন। আলুটিলা পর্যটন এলাকায় প্রধান সড়কেও লোকারণ্য ছিল। পর্যটন এলাকা আলুটিলা বটগাছের নিচে দাহক্রিয়ায় যাওয়া লোকজন রাস্তার ধারে পিঠা খাওয়ার জন্য দাঁড়ালে বেলা ১১টায় হঠাৎ ঢাকা থেকে আসা একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী উম্রাচিং মারমা এবং আনাও মারমা জানান, সকালে আমরা অধ্যক্ষ চন্দ্রমনি মহাস্থবিরের দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আলুটিলায় পর্যটন এলাকায় বটগাছের নিচে রাস্তার ধারে অনেকে পিঠা খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিল। এসময় কিছু বুঝে উঠার আগে ট্রাকটি রাস্তায় পাশে দাঁড়ানো লোকজনের উপর উঠে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা নিহত ও আহতদের উদ্বার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন চালক সমবায় সমিতি লি. গতকাল বিকেলে তাদের প্রধান কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠক করে। এতে নেতৃবৃন্দ ট্রাক চাপায় নিহত ও আহতও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এছাড়া দুর্ঘটনাকারী ট্রাক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এতে বক্তব্য রাখেন সভাপতি মনোতষ ধর, সাধারণ সম্পাদক এস এম শফি, মিনি ট্রাক সমিতির স্বপন সাহা।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে আরো একজনের মৃত্যু ঘটে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে।