প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ফেনীর রতনপুর স্কুলে খুশির জোয়ার | বাংলারদর্পন

ফেনী প্রতিনিধি: জীবনটাই মানুষের জন্য ব্যয় করেছেন আফজালুর রহমান। ১৯৭২ সালে বাড়ির পাশেই ৪৫ শতাংশ জায়গায় ফেনী সদর উপজেলার রতনপুরে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এ স্কুল থেকে অনেক ছাত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে বড় বড় পদে আছেন।

২০০৬ সালের ডিসেম্বরে মারা যান শিক্ষানুরাগী এই ব্যক্তি। আমৃত্যু ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। সম্মান, ভালোবাসা অকাতরে পেলেও তার প্রতিষ্ঠিত স্কুল নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অস্বস্তিতে ছিলেন রণাঙ্গনের এ যোদ্ধা।

জীবদ্দশায় দেখে না গেলেও তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলের ভবনের ব্যবস্থা হয়েছে। তার ছেলের এসএমএস পেয়ে স্কুলভবন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ঘোষণায় পুরো এলাকায় খুশির জোয়ার বইছে। এলাকাবাসী এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।

খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে ছুটে যান।

পরিবার সূত্র জানিয়েছে, জীবনের শুরুতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন আফজালুর রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও সনদের জন্য আগ্রহ দেখাননি। অসুস্থতাজনিত কারণে চাকরি ছেড়ে এলাকায় চলে আসেন। সরব থাকেন সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী দুই মেয়াদে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭২ সালে নিজ এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ৭৪ সালে তৎকালীন জেলা গভর্নর খাজা আহম্মদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ওই স্কুলে আধাপাকা টিনশেড ভবনের তিনটি কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম চলত। ওই ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হলেও সেটিতেও শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান হয় না। ছাদের পলেস্তরা খসে পড়েছে। বৃষ্টিতে ছাদ ছুইয়ে পানি পড়ে। বর্ষায় দুই ক্লাসের শ্রেণি কার্যক্রম চলে একসাথে। এনিয়ে দীর্ঘদিন নানা চেষ্টা করেও ফল হয়নি।

গত ২২ জুন সৌদি প্রবাসী আনোয়ার হোসেন খোকন প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল ফোন নম্বরে একটি এসএমএস পাঠান। তিনি আফজালুর রহমানের একমাত্র সন্তান। খোকন স্কুলটির কোড নম্বর পাঠিয়ে জানান, স্কুলটি মুক্তিযোদ্ধা আফজালুর রহমানের জায়গাতে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষের অভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করতে পারছে না।

এসএমএসটি পাওয়ার পর ওই দিন ভোর সাড়ে ছয়টায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর একান্ত সচিব (১) তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। আর স্কুলটির কোড নম্বর মিলিয়ে একান্ত সচিব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এর সাথে যোগাযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পৌঁছে দেন।

এরপর শনিবার বিকালে পাঁচ শ্রেণিকক্ষের একটি ভবনের অনুমোদন দেয়া হয়।

স্কুল ভবনটিকে পর্যায়ক্রমে বহুতল করা যাবে। শিগগিরই এই ভবনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মারজাহান আক্তার বলেন, ‘এ বিদ্যালয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধকতার কারণে ভবন নির্মাণ হয়নি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় আমরা অনেক খুশি। অনেক ভালো লাগছে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের ঘোষণা দেয়ায় এলাকাবাসী দারুণ খুশি।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান।

আফজালুর রহমানের একমাত্র সন্তান প্রবাসী আনোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই এলাকায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই আমার বাবা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। গতবারও আমি বাড়ি গিয়ে একটি ভবনের জন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনে অনেক যোগাযোগ করেছি। মন্ত্রণালয়ের জটিলতার কারণে সেটি আটকে যায়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের এ দুঃখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনার চেষ্টা করেছি। তার নজরে আসামাত্রই তিনি প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এতে করে আমার বাবা আফজালুর রহমানের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *