রাউজানে মদ-ইয়াবা দিয়ে সিএনজি চালকদের হয়রানির অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

সোর্সের মাধ্যমে সিএনজি অটোরিক্সায় ইয়াবা ও মদ দিয়ে চালককে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রাউজান থানার এক এএসআই এর বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার ভুক্তভোগী একদল টেক্সি চালক পুলিশের ওই তিন সোর্সকে আটক করেছে। তাদেরকে পিটুনি দিয়ে পুলিশকে দেয়া ওই টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়।

 

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছে রাউজান থানা পুলিশের এএসআই ফারুক তার তিন সোর্স যথাক্রমে রাউজান ইউনিয়নের কাজী পাড়া এলাকার আব্দুল শুক্কুরের পুত্র নাঈম (২৩), হরিষখান পাড়া এলাকার মো. আলীর পুত্র মো. মাসুদ (১৯) ও পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আঁধার মানিক এলাকার ঠান্ডা মিয়া চৌকিদার বাড়ির মাহবুবুল আলমের পুত্র সাইমন (২০)কে কমিশনের বিনিময়ে ইয়াবা সরবরাহ করে বিভিন্ন সিএনজিতে লুকিয়ে রাখার জন্য নিয়োগ করেছিল। এরপর সোর্সের ফোনে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নির্ধারিত জায়গা দাঁড়িয়ে সিএনজিটি আটকে তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা উদ্ধার করার নামে গাড়িসহ চালককে থানায় নিয়ে যেতো। এই ঘটনায় আটকদের সাথে দফারফা করে পরে তাদের ছাড়া হতো। গতকাল সিএনজি চালকদের হাতে আটক পুলিশের তিন সোর্স স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

 

সাংবাদিকরা ক্ষতিগ্রস্ত সিএনজি চালক ও দায়ী সোর্সদের অডিও ভিডিও রেকর্ড করেন। আটককৃতদের দেয়া তথ্য মতে, রাউজান থানার এ.এস.আই ফারুক মিয়া তাদেরকে ইয়াবা ও মদ সরবরাহ করেন। তারা যাত্রী সেজে পরিকল্পিতভাবে সিএনজি টেক্সিতে সেগুলো লুকিয়ে রাখেন। মদ বা ইায়াবা দেয়ার পর পুলিশকে গাড়ির নম্বর ও অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে দেয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের হাতেনাতে ধরে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নেয়ার পর মুক্তির বিনিময়ে দাবি করা হয় লাখ টাকা। দর কষাকষিতে কেউ ৫০ হাজার, আবার কেউ তার চেয়ে কম টাকায় মুক্তি পেয়েছেন অনেকে। ঘটনাস্থলে থাকা এমন কয়েকজন ভুক্তভোগীর মধ্যে একজন দিদারুল আলম।

 

তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ আগে তার চট্টগ্রাম ১১–৯৫৪৪ নম্বরের সিএনজি টেক্সিতে ইয়াবা দিয়ে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর ছাড়ার শর্তে তার কাছে পুলিশ ১ লাখ টাকা দাবি করে। পরে থানায় দালালের মাধ্যমে দর–কষাকষিতে ৫০ হাজার টাকায় তিনি ছাড়া পান। পুলিশের সোর্সদের আটক করার স্থান দিয়ে যাচ্ছিলেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা। তিনি যাওয়ার পথে জটলায় পড়ে গাড়ি থেকে নেমে পুলিশ সোর্স ও ভুক্তভোগীদের কথা শুনেন। তিনি বিষয়টি লিখিত আকারে প্রশাসনকে জানাতে তাদের পরামর্শ দেন।

 

অভিযুক্ত এ.এস.আই ফারুক মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 

এবিষয়ে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেপায়েত উল্লাহ জানান, তিনি ওই ঘটনা শুনে কয়েকজন অফিসারসহ সিএনজি চালক ও আটক সোর্সদের সাথে কথা বলতে রাউজান ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। রাত আটটা পর্যন্ত সেখানে বসে সিএনজি চালকদের সাথে কথা বলেছেন। তাদের প্রতি ধৃত তিন সোর্সকে পুলিশের সামনে হাজির করতে অনুরোধ করলেও তারা ওদের হাজির করেনি। সিএনজি চালকরা সেখানে এএসআই ফারুককে প্রত্যাহার ও তার শাস্তি দাবি করে সেখানে শ্লোগান দিচ্ছিল।

 

এব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, থানায় দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সিএনজি চালক ও দায়ী সোর্সদের অডিও–ভিডিও রেকর্ড তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *