সোনালী আঁশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক :

প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্যের পরিবেশ বিধ্বংসী আগ্রাসন ঠেকাতে পাটের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে বিশ্বের সচেতন মানুষ। ফলে দেশের এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের বিশ্বব্যাপী সুদিন ফিরে আসছে। পাটপণ্যের জাগরণ শুরু হয়েছে নতুন করে।

কয়েক দশক আগে পাটই ছিল আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য। আর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের একমাত্র হাতিয়ারও ছিল এই সোনালি আঁশ পাট। তবে জুটমিল মালিকদের অজ্ঞতা, যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব এবং বিগত সরকারের উদাসীনতায় পাটশিল্প সম্ভাবনার শিল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। তবে আশার কথা হচ্ছে আমাদের সোনালী আঁশের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন ধরণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১২ কোটি ৭০ লক্ষ বর্গ মিটার উন্নত ধরণের চটের চাহিদা রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৮৫ মিলিয়ন ডলার। এই শিল্পের উন্নতি হলে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে ৮৫ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব হবে।

ইপিবির তথ্যমতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। অথচ ২০০৯ সালে এই খাতে রপ্তানি ছিল মাত্র ০.৫ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে ৮২.৮ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১২% বেশি। আগামী ৫ বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

ইউরোপের বাজারে বর্তমানে বছরে ৫০০ বিলিয়ন পচনশীল পলিব্যাগের চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদাকে সামনে রেখে পাট শিল্পকে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে সরকার।

তাছাড়া পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত পাট পাতা থেকে চা ইতোমধ্যেই বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিজেএমসি এই চা শিল্পকে বেগবান করতে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাট পাতা হতে চা উৎপাদনের একটি কারখানা নির্মাণ প্রকল্প শুরু করেছে।

বর্তমানে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৭ টি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ৭৯ টি পাটকল আছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ১৬ লক্ষ ৪৫ হাজার একর জমিতে পাটচাষ হয়েছে। এতে উৎপাদিত পাটের পরিমান ১৩ লক্ষ ৩৮ হাজার টন।

বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম পাটের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছেন। এছাড়া পাটের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাক ‘ম্যাক্রোফমিনা ফ্যাসিওলিনা’র জিনোম সিকোয়েন্সও বের করে ফেলেছেন। অদূর ভবিষ্যতে পাটের উচ্চফলনশীল কিছু নতুন প্রজাতি উদ্ভাবিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেগুলো লবণাক্ত জমিতে জন্মাতে এবং অল্প পানিতে পচতে সক্ষম। এছাড়া ভবিষ্যতে উচ্চমান সম্পন্ন দেশী পাট দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পের সুতা উৎপাদন করাও সম্ভব হবে। ক্ষতিকর কীটদের নাড়ি-নক্ষত্র জানায় তারাও হয়তো আর সুবিধা করে উঠতে পারবে না। ‘বিনা’ এবং ‘বিজেআরআই’র বিজ্ঞানীগণ এ সংক্রান্ত গবেষণার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলছেন।

পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)। এরই মধ্যে ২৩৫ ধরনের দৃষ্টিনন্দন বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনও হচ্ছে। এছাড়া পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প ‘সোনালি ব্যাগ’, ভিসকস, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, চারকোল, পাট পাতার পানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পাট শিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচনে কাজ করছে। ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’-এর আওতায় ১৭টি পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে বছরে প্রায় ১০০ কোটি পিস। বিশেষ অভিযান পরিচালনার ফলে আইনটি প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। পাটপণ্যকে উৎসাহিত করতে ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী ৫ বছর এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করে আবারো পাটশিল্প আমাদের রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।আমাদের সোনালী আঁশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্যের পরিবেশ বিধ্বংসী আগ্রাসন ঠেকাতে পাটের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে বিশ্বের সচেতন মানুষ। ফলে দেশের এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের বিশ্বব্যাপী সুদিন ফিরে আসছে। পাটপণ্যের জাগরণ শুরু হয়েছে নতুন করে।

কয়েক দশক আগে পাটই ছিল আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য। আর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের একমাত্র হাতিয়ারও ছিল এই সোনালি আঁশ পাট। তবে জুটমিল মালিকদের অজ্ঞতা, যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব এবং বিগত সরকারের উদাসীনতায় পাটশিল্প সম্ভাবনার শিল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। তবে আশার কথা হচ্ছে আমাদের সোনালী আঁশের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন ধরণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১২ কোটি ৭০ লক্ষ বর্গ মিটার উন্নত ধরণের চটের চাহিদা রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৮৫ মিলিয়ন ডলার। এই শিল্পের উন্নতি হলে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে ৮৫ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব হবে।

ইপিবির তথ্যমতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। অথচ ২০০৯ সালে এই খাতে রপ্তানি ছিল মাত্র ০.৫ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে ৮২.৮ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১২% বেশি। আগামী ৫ বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

ইউরোপের বাজারে বর্তমানে বছরে ৫০০ বিলিয়ন পচনশীল পলিব্যাগের চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদাকে সামনে রেখে পাট শিল্পকে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে সরকার।

তাছাড়া পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত পাট পাতা থেকে চা ইতোমধ্যেই বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিজেএমসি এই চা শিল্পকে বেগবান করতে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাট পাতা হতে চা উৎপাদনের একটি কারখানা নির্মাণ প্রকল্প শুরু করেছে।

বর্তমানে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৭ টি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ৭৯ টি পাটকল আছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ১৬ লক্ষ ৪৫ হাজার একর জমিতে পাটচাষ হয়েছে। এতে উৎপাদিত পাটের পরিমান ১৩ লক্ষ ৩৮ হাজার টন।

বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম পাটের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছেন। এছাড়া পাটের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাক ‘ম্যাক্রোফমিনা ফ্যাসিওলিনা’র জিনোম সিকোয়েন্সও বের করে ফেলেছেন। অদূর ভবিষ্যতে পাটের উচ্চফলনশীল কিছু নতুন প্রজাতি উদ্ভাবিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেগুলো লবণাক্ত জমিতে জন্মাতে এবং অল্প পানিতে পচতে সক্ষম। এছাড়া ভবিষ্যতে উচ্চমান সম্পন্ন দেশী পাট দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পের সুতা উৎপাদন করাও সম্ভব হবে। ক্ষতিকর কীটদের নাড়ি-নক্ষত্র জানায় তারাও হয়তো আর সুবিধা করে উঠতে পারবে না। ‘বিনা’ এবং ‘বিজেআরআই’র বিজ্ঞানীগণ এ সংক্রান্ত গবেষণার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলছেন।

পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)। এরই মধ্যে ২৩৫ ধরনের দৃষ্টিনন্দন বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনও হচ্ছে। এছাড়া পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প ‘সোনালি ব্যাগ’, ভিসকস, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, চারকোল, পাট পাতার পানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পাট শিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচনে কাজ করছে। ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’-এর আওতায় ১৭টি পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে বছরে প্রায় ১০০ কোটি পিস। বিশেষ অভিযান পরিচালনার ফলে আইনটি প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। পাটপণ্যকে উৎসাহিত করতে ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী ৫ বছর এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করে আবারো পাটশিল্প আমাদের রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *