রমজানের সামাজিক উপকারিতা : আত্মশুদ্ধির এক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা | বাংলারদর্পন 

নিউজ ডেস্ক: ইসলামী ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মুসলমানদের প্রায় সব এবাদত বিশেষ করে রোজা মানবিক ও সামাজিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাহে রমজানে বান্দার জন্য যেমন আধ্যাত্মিক শিক্ষা রয়েছে, তেমনি সামাজিক গুরুত্বও রয়েছে। মূলত রমজানের সিয়াম সাধনার সামাজিক তাৎপর্য যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সিয়াম শব্দটি সউম-এর বহুবচন। এই সউম শব্দের আভিধানিক অর্থ- ‘ঐ সব বিষয় হতে বিরত থাকা, যেগুলোর প্রতি নফস কিংবা আত্মা সাধারণত ধাবিত।’ মানব জাতির সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যেই রমজানের আগমন। অতএব সঙ্গত কারণেই আমাদের সমাজে রয়েছে মাহে রমজানের অপরিসীম প্রভাব।

রমজানে বিশ্বের মুসলমানরা অত্যন্ত আগ্রহ ও নিষ্ঠার সঙ্গে রোজা পালন করে থাকেন। রোজার মাধ্যমে তারা আল্লাহতায়ালার আদেশ-নিষেধ মোতাবেক জীবন চলার পথ পরিচালনা করেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সমাজে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরে আসে, সমাজ হয় সুন্দর-সুশোভিত। মাহে রমজানে আমাদের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি বৃদ্ধি পায়। মুসলিম সমাজ সকল প্রকার ঝগড়া-বিবাদ, কটূ কথা ও অশ্লীলতা-বেহায়াপনা পরিহার করে একটি সুন্দর জীবন যাপনে ব্রতী হয়।

মুসলমানদের সামাজিক হওয়া ঈমানের দাবি। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, সে মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় তার প্রতিবেশী উপোস থাকে। ইসলামী এই চেতনার কারণে মুসলমানকে সামাজিক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন, সামাজিক গুণ সৃষ্টিতে রমজান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রমজানে মুসলমানরা একসাথে ইফতার করে। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর মাঝে ইফতারি বিলি- বণ্টন ও দান করে। এভাবে তাদের আত্মীয়তা ও সামাজিক বন্ধন মজবুত হয়। গরীব-এতিম-মিসকিন মুসলমান নারী-পুরুষ এবং অভাবী আত্মীয়গণ যেন রোজা রমজানে সুন্দরভাবে খেতে পারে এবং ভালোভাবে চলতে পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখে। তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে।

রোজাদার ব্যক্তি ভোর রাত থেকে ইফতারের সময় পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রাখে। ফলে তারা অনুভব করতে পারে বছরের অন্যান্য সময় না খেয়ে থাকা গরীবদের দুঃখ। তাদের মনে গরীবের জন্য সৃষ্টি হয় মমতাবোধ। এই জন্যই আল্লাহর নবী (সা.) রমজানের এ মাসকে সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস বলেছেন। মুসলমানরা এ রমজান মাসে গরীব রোজাদারদের ইফতার করায়। কেউ সাথে নিয়ে ইফতার করে, কেউ আবার তাদেরকে ইফতার সামগ্রী কিনে দেয়। এভাবে তাদের মানবিকতার প্রকাশ পায় এবং মানবিক গুণের বিকাশ ঘটে। এছাড়া ধনবান রোজাদার মুসলমান গরীবদের এ মাসে যাকাত ও ফিতরা দেয়, বেশি বেশি করে দান করে। এভাবে গরীবদের প্রতি তাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে।

রমজানের রোজার প্রভাবে মুসলিম সমাজে সকল প্রকার লোভ-লালসা হ্রাস পায়। ফলে যাবতীয় হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে একে অপরকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে। সকলেই ওয়াদা-আমানত রক্ষা করে চলতে সচেষ্ট হয়। এছাড়া রোজার প্রভাবে যেহেতু কু-প্রবৃত্তিসমূহ অবদমিত হয় সেহেতু সমাজের মানুষের মধ্যে শংকা থাকে না, নিরাপত্তার কোনরূপ অভাব বোধ হয় না। গোটা সমাজেই এরূপ অবস্থার প্রতিফলন ঘটে।

একজন রোজাদার কখনও কারো ক্ষতির কারণ হতে পারে না। মিথ্যা বলতে পারে না। কারণ রোজা রাখার মাধ্যমে তিনি তার কু-প্রবৃত্তিকে দমন করার অনুশীলন করেছেন। রমজানের এই সামাজিক তাৎপর্য যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে ব্যক্তিজীবন, সমাজ জীবন ও রাষ্ট্রজীবন থেকে অস্থিরতা, ঘুষ-দুর্নীতি, চরিত্রহীনতা, মিথ্যাবলা, পশুত্ব দূর করা সম্ভব। যা একজন মানুষকে বদলে দেওয়ার পাশাপাশি গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রকে কল্যাণমুখী করে তুলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *