নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ রূপান্তরের অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৮ এবং ২০১৪ এর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় একের পর এক মাইলফলক সৃষ্টি করে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বে। তথ্য প্রযুক্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন এবং এযাবত কালের সবচাইতে বড় মাইলফলক হতে যাচ্ছে উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় থাকা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশন বড় রকমের বিপ্লব তৈরী করতে যাচ্ছে।
২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ এবং সেবা পরিচালনার জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ হাজার ৩১৫ দশমিক ৫১ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিডার্স ফাইন্যান্সিং ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।
২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেসের সাথে একটি চুক্তি সই করে।থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস ফ্যালকন-৯ মহাকাশযানের মালিক মার্কিন কোম্পানি স্পেস এক্সপ্লোরেশান টেকনোলজিস কর্পোরেশন বা স্পেসএক্স-এর সাথে সমন্বয় করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করবে। ফ্যালকন-৯ হল একুশ শতকের সবচেয়ে আধুনিক মহাকাশযান। নাসার সাথে কাজ করা স্পেসএক্স মূলত সবচেয়ে আধুনিক স্যাটেলাইটগুলো এখন মহাকাশে পাঠিয়ে থাকে।
রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে কক্ষপথ বা অরবিটাল স্লট। এই কক্ষপথেই উড়বে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
বর্তমানে দেশে টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানসহ টেলিকমিউনিকেশন খাতে বিভিন্ন কাজে বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করায় বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে স্থাপনের পর থেকে উল্লেখিত কাজের জন্য বিদেশী স্যাটেলাইট এর সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হবে না, ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের বিপুল পরিমান বৈদেশিক অর্থ সাশ্রয় হবে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। ‘ট্রান্সপন্ডার লিজের’ মাধ্যমে বছরে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে এবং ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে বিনিয়োগের অর্থ তুলে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময় গত রাত ১টা ৩৭ মিনিটে দেশের প্রথম এ যোগাযোগ উপগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে অরবিটাল স্লটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু কথা ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে (স্ট্যান্ডার্ড গ্রাউন্ড সিস্টেম অটো অ্যাবোর্ট) শুক্রবার এটির উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয় স্পেসএক্স শুক্রবার এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে (স্ট্যান্ডার্ড গ্রাউন্ড সিস্টেম অটো অ্যাবোর্ট) আজ শুক্রবার উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ স্থল থেকে নামানো হয়েছে। উৎক্ষেপণের মাত্র ৪২ সেকেন্ড আগে আজ এটির উৎক্ষেপণ বাধাগ্রস্ত হয়। স্পেসএক্স সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কাল একই সময়ে আবারো স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা চালাবে।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ চালু হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সারাদেশে টেলিফোন সংযোগ নেওয়া যাবে, যা তথ্যপ্রযুক্তির সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করার পথ সুগম করবে। এটি চালু হলে বিদেশি স্যাটেলাইট ছাড়াই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম মূল্যে সম্প্রচার ও যোগাযোগ সেবা দেওয়া যাবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের “সোনার বাংলা” এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার পথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।