ভারতের হরিয়ানায় প্রকাশ্যে নামাজ পড়তে না দেয়ার সিদ্ধান্ত !

নিউজ ডেস্ক :

 

ভারতে বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় প্রকাশ্য স্থানে নামাজ পড়তে দেয়া হবে না বলে হিন্দুত্ববাদী জোটের পক্ষ থেকে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

হরিয়ানার গুরুগ্রামে খোলা জায়গায় নামাজ পড়া বন্ধ করতে রোববার বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বৈঠকে বজরং দল, শিব সেনা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, হিন্দু ক্রান্তি দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, রাষ্ট্রীয় নির্মাণ সঙ্ঘ, ভারত বাঁচাও যাত্রা আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ আশপাশের বাসিন্দা ও কিছু গ্রামের সরপঞ্চরা (গ্রামপ্রধান) উপস্থিত ছিলেন।

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার রোববার প্রকাশ্য স্থানে নামাজ পড়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘নামাজ পাঠ হওয়া উচিত মসজিদ, ঈদগাহের মতো নির্দিষ্ট ধর্মীয় স্থানে। যদি জায়গার অভাব হয়, তবে নিজের বাড়িতে নামাজ পড়ুন।

তিনি আরও বলেন, এত দিন বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু প্রতিবাদ এলেই বিষয়টি আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এখন জনসমক্ষে নামাজ পড়া বেড়ে চলেছে। নামাজ নির্দিষ্ট জায়গাতেই পড়তে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই গুরুগ্রামে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে প্রকাশ্য স্থানে নামাজ পড়তে দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বেশ কিছু দিন ধরে হরিয়ানার গুরুগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে জুমা নামাজ পড়াতে বাধা দিচ্ছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ দল, হিন্দু ক্রান্তি দল, গোরক্ষক দল এবং শিবসেনার মতো সংগঠন।

তাদের কর্মী সমর্থকরা গুরুগ্রামের ওয়াজিরাবাদ, অতুল কাটারিয়া চক, সাইবার পার্ক, বখতিয়ার চক এবং সাউথ সিটি এলাকায় শুক্রবারের জুমা নামাজ পড়ায় নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছে।

নামাজ বন্ধ করার জন্য সেখানে গিয়ে তাদের সদস্যরা জড়ো হয়ে ‘জয় শ্রী রাম’ এবং ‘রাধে-রাধে’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় ‘বাংলাদেশি ফিরে যাও’ স্লোগানও দেয়া হয়।

তাদের দাবি, সড়কের পাশে, পার্কে বা খালি পড়ে থাকা সরকারি জায়গায় নামাজ পড়ার অনুমতি নেই। ফাঁকা জমি দখল করতেই প্রকাশ্যে নামাজ পড়া শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে নেহেরু যুব সংগঠন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি চ্যারিটেবল ট্রাস্টের প্রধান ওয়াজিদ খান বলেন, পুলিশের সঙ্গে হওয়া এক বৈঠকে তিন স্থানে নামাজ না পড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

এসব জায়গায় নামাজের জন্য সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, এর আগে ৩৪টি স্থানে নামাজ পড়ার জন্য সহমত পোষণ করা হয়েছিল।

মসজিদে মুসল্লিদের অতিরিক্ত ভিড়ের জন্য অথবা সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে মসজিদ অনেক দূরে হওয়ায় অনেক সময় মুসল্লিরা সরকারি খোলা ময়দানে নামাজ পড়তে বাধ্য হন।

এদিকে হিন্দুত্ববাদীদের তৎপরতার সমালোচনা করে বিরোধী কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল বলেছে, যদি এ রকম হয় তাহলে ‘জাগরণ’ ইত্যাদিতেও নিষেধাজ্ঞা হওয়া উচিত।

ওয়াজিরবাদে নামাজে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশে অভিযোগকারী হাজী শাহজাদ খান বলেন, ১০ জায়গায় নামাজ পড়তে বাধা দেয়া হয়েছে।

সমিতির (সংযুক্ত হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি) এসব লোকের আইন হাতে তুলে নেয়ার অনুমতি কে দিয়েছে?

গুরুগ্রামে কেবলমাত্র ২২টি মসজিদ আছে এবং ৭ লাখেরও বেশি মুসলিম জনবসতি। এ রকম অবস্থায় আমাদের কাছে বেশি কিছু বিকল্প নেই। নামাজের জন্য তো আমরা কারো সমস্যা সৃষ্টি করি না।

এদিকে প্রকাশ্য স্থানে জুমা নামাজ পড়া বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে সমস্যা সৃষ্টি হলে বেশকিছু জায়গায় নামাজের সময় পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।

অন্যদিকে, বিরোধীদের সমালোচনার মুখে সোমবার হরিয়ানা সরকারের মন্ত্রী অনিল ভিজ বলেছেন, কখনো কখনো যদি কাউকে পড়তে হয় (নামাজ) তাহলে ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে। কিন্তু কোনো স্থান দখল করার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়া ভুল। তার অনুমতি দেয়া যেতে পারে না।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাল্টাপাল্টি আলোচনা শুরু হলে সরদার মন্তেশ্বর সিং নামে এক ব্যক্তি বলেছেন, আমি দেখছি কিছু মুসলিম চণ্ডীগড় রেলস্টেশনে নামাজ পড়ছিলেন। তারা কি রেলস্টেশন দখল করে নিয়েছেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *