রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ওআইসিকে চাপ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা

নিউজ ডেস্ক :

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য মায়ানমারকে চাপ দেয়ার জন্য ইসলামি সম্মেলন সংস্থাকে (ওআইসি) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দৃঢ়ভাবে থাকার আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (০৫ মে) সকালে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী ওআইসির ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভার (সিএফএম) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এবং ওআইসি মহাসচিব ইউসুফ এ ওথাইমিন।

শেখ হাসিনা বলেন, ওআইসিকে অবশ্যই মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার স্বাক্ষরিত সমঝোতা অনুযায়ী তাদের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের দেশে নিরাপদে ফেরত নিয়ে যায়। কারন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও আমাদের সবার মতো মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার এবং জীবন-জীবিকার অধিকার রাখে।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়ানোর অমোঘ বাণী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কাজেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখি, ওআইসি তখন নিশ্চুপ থাকতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘উন্নয়ন আমাদের অধিকার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আমাদের নাগালের মধ্যে এবং সামাজিক অগ্রগতির উপায় আমাদের হাতে। আমাদের এখন প্রয়োজন যৌথ ইসলামি কর্মকৌশল ঢেলে সাজানো।’ তিনি এ প্রসঙ্গে তাঁর পাঁচ দফা চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন:

এক. ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের ওপর সবাইকে আস্থাশীল হতে হবে। সাম্প্রদায়িক মানসিকতা বর্জন করতে হবে এবং ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা বা সমাজে বিভাজন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

দুই. শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব বিবাদের সমাধান করতে হবে। আমাদের নিন্দুকদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ না দিয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। ওআইসিতে আমাদের বিরোধ মীমাংসার প্রক্রিয়াসমূহকে শক্তিশালী করতে হবে এবং আমাদের নিজস্ব শক্তি ও সম্পদসমূহের আরও উৎকর্ষ সাধন করতে হবে।

তিন. আমাদের আত্মসচেতন আলোকিত জীবন যাপন করতে হবে। আমাদের মৌলিক বিশ্বাসকে অটুট রেখে আজকের আধুনিক সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে জীবন যাপন করতে হবে। তাহলেই ইসলাম-সম্পর্কিত ভীতি দূর হবে। আমাদের মূল্যবোধভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের লালন করে আলোকিত বিশ্বব্যবস্থার পথ দেখাতে হবে।

চার. দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণ এবং জরুরি মানবিক দুরবস্থা মোকাবিলার জন্য ইসলামি সম্মেলন সংস্থার বলিষ্ঠ কর্মসূচিসহ একটি দ্রুত কার্যকর উন্নয়নমূলক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা আবশ্যক। ওআইসি-২০২৫ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

পাঁচ. ইসলামের শাশ্বত মূল্যবোধ যেমন শান্তি, সংযম, ভ্রাতৃত্ব, সমতা, ন্যায়বিচার ও সমবেদনা থেকে আমাদের সর্বদা অনুপ্রেরণা ও শক্তি আহরণ করতে হবে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং ওআইসি সম্মেলনের সভাপতির প্রতিনিধি বেকির বোজড্যাগসহ এশিয়া, আরব ও আফ্রিকার পক্ষে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত ভাইস মিনিস্টার আবদুর রাহমান মোহাম্মাদ ফাসির, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল বিন আহমেদ আল জুবায়ের এবং সেনেগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদকি কাবা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *