পুলিশ সুপারের কান্ড: প্যান্ট চুরির অভিযোগে সাংবাদিক রিমান্ডে

ঢাকা : জেলার এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সীমাহীন আক্রোশের শিকার হয়েছেন সাংবাদিক নাজমুল হুদা। তাকে তথ্যপ্রযুক্তি আইন মামলায় গ্রেফতারের পর গার্মেন্টস কারখানার প্যান্ট চুরির মামলায়ও জড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে নাজমুলকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ নির্মম নির্যাতন করেছে।

তারপরও থামছে না আশুলিয়া থানা পুলিশ। এ পর্যন্ত ছয়টি মামলায় নাজমুল হুদাকে জড়ানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আদালতে পুলিশ তাকে দফায় দফায় রিমান্ড চাইছে।

শ্রমিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৩ ডিসেম্বর আশুলিয়ার গার্মেন্ট শিল্প এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলন নস্যাৎ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপসহ ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নাজমুল হুদা একুশে টিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ ঘটনার সংবাদ পাঠানোয় ক্ষিপ্ত হন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিম।
তিনি গত ১৮ ডিসেম্বর নাজমুল হুদাকে জামগড়ায় ডেকে নিয়ে গালাগাল করেন এবং গার্মেন্ট শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ না করার জন্য তাকে কড়াভাবে শাসিয়ে যান।

এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুলকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, গার্মেন্ট নিয়ে আর একটা লাইন নিউজ হলে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে। এ সময় সেখানে দুটি টিভি চ্যানেলের স্থানীয় রিপোর্টার ও ক্যামেরা পার্সনসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পেশাগত দায়বদ্ধতায় নাজমুল হুদা আশুলিয়ার শ্রমিক অসন্তোষ, গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ, পুলিশের মারমুখী ভূমিকা ও গণহারে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের খবর প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া তার প্রতি ক্ষিপ্ত হওয়ার নেপথ্যে কারণ ছিল, শ্রমিক অসন্তোষ চলাকালে কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা কারখানা মালিকদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর এ অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছিলেন সাংবাদিক নাজমুল। কয়েকজন ভুক্তভোগী কারখানা মালিকের বক্তব্য ভিডিওচিত্র ধারণ করতেই তা নজরে পড়ে আশুলিয়া থানার ওসি মোহসীনুল কাদিরের। তিনি এই ভিডিওচিত্র প্রকাশ না করে নাজমুলকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে তা জমা দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু নাজমুল সে অনুরোধ না রেখে সংবাদ প্রকাশের উদ্যোগ নেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ওসি মোহসীনুল কাদির বলেন, ‘আমি বারবারই নাজমুল ভাইকে বলেছি, শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়ায় এমন কোনো খবর ছাপাবেন না, এমন কোনো ভিডিওচিত্র প্রকাশ করবেন না, যা গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনকে ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারে।’ এক পর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিম নিজেও নাজমুলকে ‘স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে নিউজ’ না করার অনুরোধ করেন।

কিন্তু নাজমুল সাড়া না দেওয়ায় আক্রোশে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি আশুলিয়া ও সাভার থানার ওসিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক নাজমুলের হাত-পা গুঁড়িয়ে দিতে কঠোর নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ পেয়েই গত ২৩ ডিসেম্বর বিকালে আশুলিয়া থানার ওসি মোবাইল ফোনে নাজমুল হুদাকে বাইপাইল আসার অনুরোধ করেন। তাকে জানানো হয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গার্মেন্ট কারখানার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এ ব্যাপারে তিনি নাজমুল হুদার সঙ্গে একটু পরামর্শ করতে চান।

ওসির কথা বিশ্বাস করে নাজমুল বাইপাইল পৌঁছাতেই চারদিক থেকে পুলিশ সদস্যরা তাকে জাপটে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যান। সেখানে গাড়ি থেকে নামানোর সময়ই ডিবি পুলিশের দুই সদস্য সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে লাথি, চড়-থাপ্পড় দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *