নিউজ ডেস্ক: ১৫ মে আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক মান্নানের পরিবর্তে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার। তাই একদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত মান্নানের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি ও অন্যদিকে জোটের শরিক দল জামায়াত সমঝোতার মাধ্যমে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করলেও প্রার্থী হিসেবে হাসানউদ্দিন সরকার তাদের পছন্দনীয় না হওয়ায় এবং বিশ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিকদের সাথেও শীতল সম্পর্কের কারণে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থিতার বিষয়ে এম এ মান্নান অনেক অশাবাদী ছিলেন। কিন্তু তার অসুস্থতা ও একাধিক মামলার জটিলতার কারণে তাকে বাদ দিয়ে হাসান সরকারকে মনোনয়ন দিলে তিনি মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়েন। গাজীপুরে বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে এম এ মান্নান ও হাসান সরকারের দীর্ঘদিনের বিরোধ তাই এবার নির্বাচনের মাঠে আরো প্রকট হয়ে উঠেছে।
সূত্রমতে, অনেকেই মনে করেন, মূলত অসুস্থতাজনিত কারণে মান্নানকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি বলা হলেও প্রার্থী নির্বাচনে বরাবরের মতোই আর্থিক যোগ্যতাকেই প্রধান্য দেয়া হয়েছে। হাসান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির হাই কমান্ডকে বিপুল পরিমাণ উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে প্রার্থী হবার অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং দলীয় লোকেরাই। কিন্তু এ বিষয়ে অধ্যাপক মান্নান মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আবার নীরব হয়ে গেছেন। আর তার এ নীরবতার সাথে সাথে তার সমর্থক ও কর্মীরাও নির্বাচন থেকে নিজেদের দূরে রাখবার চেষ্টা করছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি মূল্যায়ন হলো, এম এ মান্নান প্রার্থী হিসেবে হাসান সরকারের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তিনি প্রার্থী হলে এবং দলীয় নির্দেশনা থাকলে হাসান সরকার অবশ্যই তার হয়ে কাজ করতেন। কিন্তু হাসান সরকার প্রার্থী হওয়াতে মান্নান বা তাঁর অনুসারীরা হাসানের পক্ষে থাকবেন- এর কোনোই নিশ্চয়তা নেই। অতীতেও তিনি এর নজির রেখেছেন।
অন্যদিকে হাসান সরকারের সাথে জামায়াতের সম্পর্কও ভালো নয় বলে জানা গেছে। জামায়াত নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে জোটের প্রার্থী হিসেবে এম এ মান্নানকেই চেয়েছিল। কেননা জামায়াত হাসান সরকারকে ধর্মীয়ভাবে পথভ্রষ্ট মনে করে এবং তাকে ভণ্ড পীর দেওয়ানবাগীর মুরিদ ও অনুসারী হিসেবে শত্রু হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে।
এছাড়া বিশ দলীয় জোটের অধিকাংশ শরিক দলই হাসান সরকারের চাইতে অসুস্থ হলেও এম এ মান্নানকেই অধিকতর যোগ্য ও শক্তিশালী প্রার্থী মনে করে তাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেও সূত্রমতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানের ইচ্ছাতেই হাসানউদ্দিন সরকারকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়।
তাই একদিকে গাজীপুরের স্থানীয় রাজনীতিতে এম এ মান্নানের মতো প্রভাবশালী নেতা ও তার অনুসারীদের নীরব হয়ে যাওয়া এবং অন্যদিকে জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতসহ জোটের অন্যান্য দলেরও অসন্তুষ্টিই বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের জন্য কাল হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। কেননা, নিজ দলীয় নেতাদের কোন্দল ও কর্মীদের বিরাট একটি অংশ এবং জোটের নিস্ক্রিয়তা প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য সহজ বিজয় এনে দিতে পারে।