নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টার আশংকা দেখা দিয়েছে। যেখানে, প্রতিনিয়তই বাঙ্গালী বিদ্বেষী অপপ্রচার চালিয়ে ঘৃণা, অবিশ্বাস আর সন্দেহের বীজ বপনের কাজে ফেসবুক ক্রমেই প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে, বেছে বেছে শুধুমাত্র বাঙ্গালীদেরকে টার্গেট করা হচ্ছে, তাই নয়। বরং, অনেক ক্ষেত্রেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাশাপাশি এসব পোস্টে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন এমনকি সরকার এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারী উপাদানও থাকে। “বাংলাদেশে মিডিয়া ক্যু’র সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছে পার্বত্য বাঙালিরা।
অনেক পাহাড়ী মেয়ের জন্যে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক। বাঙ্গালী ছেলের সাথে মেলামেশা করলে বা এক সাথে ছবি তুললেই পাহাড়ী মেয়েরা পাহাড়ী আঞ্চলিক সংগঠনের সাথে জড়িত যুবকদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে এবং সরাসরি। দেবী ত্রিপুরা, বিশাখা চাকমা, উ প্রু মারমা, আয়না চাকমা, দিপা ত্রিপুরা, ফাতেমা বেগম, এবং সবিতা চাকমা এর মতো অনেক ঘটনা আছে যেখানে ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বাঙ্গালী বিদ্বেষী প্রচারণা ও ঘৃণা সৃষ্টিতে। অনেক ক্ষেত্রেই, মেয়ের বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ করে এসব ছবি ফেসবুকে চলে আসছে; বিভিন্ন ধরনের হুমকি, এমন কি নিলামে তোলা বা প্রাণনাশের হুমকিসহ। পাহাড়ী মেয়েদের ছবি, নাম, পিতার নামে এমনকি ঠিকানা পর্যন্ত ফেসবুকে পোস্ট করে, তাদেরকে সর্বত্র হেয় করার পাশাপাশি তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে।
২০১৭ সালের জুন মাসে রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত হয় স্মরণ কালের অন্যতম ভয়াবহ পাহাড় ধস। তাৎক্ষণিক উদ্ধারকাজে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় একজন মেজর ও একজন ক্যাপ্টেনসহ ৫ জন সেনাসদস্য শাহাদাত বরণ করার পরেও ঘৃণা প্রকাশ করতে দেখা যায়। মৃত সেনাসদস্যদের ‘অত্যাচারি এবং নরপিশাচ বলে উপস্থাপন করা হয়। অথচ, উক্ত পাহাড় ধসের ঘটনা পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় রাঙ্গামাটিতে সেনা সদস্যরা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ৮ টি আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, যেখানে দুই মাসের বেশি সময় ধরে সর্বমোট ৯৩,৩৮১ জনের খাবারের ব্যবস্থা করে এবং ২২৫৭ জনকে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা প্রেদান করে। তারা তাদের এই ঘৃণা ও উল্লাস প্রকাশে কোন রাখ ঢাকের ধার ধারেনি, বরং প্রকাশ্যেই জানান দিয়েছে ফেসবুকের মাধ্যমে।
২ জুন ২০১৭, সকালে রাঙ্গামাটির লংগদুতে পাহাড়িদের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। অনুমান করা হচ্ছে, পাহড়ি দুই যুবকের হাতে নিহত বাঙ্গালী মটর সাইকেল চালক নয়নের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিল হতে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল তরুণ এই অগ্নিকান্ডের জন্য দায়ী। ফেসবুকের কল্যাণে ঘটনাটি অতি দ্রুত লংগদুর বাইরে ছড়িয়ে দেয়া হয়, দেশে এবং বিদেশে; তবে একটু ভিন্ন ভাবে। জ্ঞাতসারেই হোক আর অজ্ঞাতসারেই হোক, এই ভয়াবহ সংবাদটি কয়েকটি দেশি এবং বিদেশী পত্রিকাতেও খানিকটা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
কিন্তু, চরম বাস্তবতা হলো, ফেসবুকের এই ঘৃণা ছড়ানো এবং বাঙ্গালী বিদ্বেষী প্রচারণা পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাশাপাশি অশান্তি এবং অসাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প পাহাড়ের বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে। নিরীহ এবং সরল মানুষগুলো প্রকৃত সত্যের পরিবর্তে মিথ্যের জালে ক্রমাগত আষ্টপৃষ্টে বাঁধা পড়ছে; না বুঝেই পরস্পরের শত্রু হয়ে মুখোমুখি হয়ে পড়ছে একই সমাজের মানুষগুলো। ষড়যন্ত্রকারীদের কুটচালে ব্যহত হচ্ছে উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি; অকার্যকর হয়ে পড়ছে রাষ্ট্রীয় আন্তরিকতা, উদারতা আর ধর্মীয় সহিষ্ণুতা।
—আজিজ পাশা লেখক, গবেষক।