আন্দোলন স্থগিত, শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ ঘোষনা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা  

 

নিউজ ডেস্ক :

কোটা সংস্কার আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের নেতারা এই ঘোষণা দেন। নেতারা জানান, আন্দোলন প্রত্যাহার বা বাতিল নয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোটা ব্যবস্থা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছেন তারা। একইসঙ্গে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় আট শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ বলে অভিহিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে কথা বলেন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তারা। এরপর তারা ছয় দফা দাবি জানান।

আন্দোলনকারীদের প্রথম দাবি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা গেজেট হিসেবে প্রকাশ করে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, সারাদেশে গ্রেফতারকৃত আন্দোলনকারীদের নিঃশর্ত মুক্তি। আন্দোলনে ‘পুলিশি নির্যাতনের’ শিকার শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে দ্রুত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের দাবি রয়েছে তৃতীয় দফায়। চতুর্থ দাবি হলো, পুলিশ ও ঢাবি প্রশাসনের দায়ের করা পাঁচটি অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। পঞ্চম দাবিতে রয়েছে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও নেতাদের পরবর্তীতে হয়রানি যাতে না করা হয়। না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ফের আন্দোলন হবে। ষষ্ঠ দফায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীর যৌক্তির দাবিতে সহমত পোষণ করা সব শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুক্ত আহ্বায়ক নূরুল হক নূর, আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, রাশেদ খান ও ফারুক হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন। প্রেস রিলিজেও তাদের চারজনের স্বাক্ষর রয়েছে। পরে নূরুল হক নূর এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে মাদার অব এডুকেশন বলে অভিহিত করেন। প্রেস ব্রিফিং শেষে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেন।

বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন পর তো আবার আরেক দল এসে বলবে, আবার সংস্কার চাই। তো কোটা থাকলেই সংস্কার। আর না থাকলে সংস্কারের কোনও ঝামেলাই নাই। কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বারবার কষ্ট পাবে কেন? এই বারবার কষ্ট বন্ধ করার জন্য আর বারবার এই আন্দোলন-ঝামেলা মেটানোর জন্য কোটা পদ্ধতিই বাতিল। পরিষ্কার কথা। আমি এটাই মনে করি, সেটা হলেই ভালো।’

বুধবার (১১ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৮ এপ্রিল দুপুর ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের পদযাত্রা শুরু হয়। পরে রাজু ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে আসে। বিকাল ৩টা থেকে পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা সেখানেই অবস্থান নেন। এ সময় শাহবাগের আশপাশের সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থান ধরে রাখলে রাত পৌনে ৮টার দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় কয়েকজনকে আটকও করে পুলিশ। এরপরই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের অ্যাকশনের মুখে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও টিএসসি এলাকায়।

পরে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একটি দল আলোচনায় বসে। তিনি তাদের দাবি যাচাই-বাছাই করার জন্য ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখতে বলেন। তবে আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করেই তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *