২৬ মার্চ, গৌরব ও অহংকারের দিন – পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার

ফেনীর পুলিশ সুপারের বানী >>>

রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে একাত্তরের এই দিন যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এদেশের মানুষ, দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি।

 

এদিনে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে পাক-ভারত উপমহাদেশের জনগণ পেয়েছিল পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি দেশ। পাকিস্তানিরা যখন বাঙালিদের নতুন করে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বাঙালিদের বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, ঠিক তখনই শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভ্যুদ্বয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষে।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ’৫৮-এর মার্শাল ’ল বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফার আন্দোলন, ’৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে ’৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সবই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মাইলফলক।

 

পাকিস্তানি শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা, কয়েকবার ফাঁসির কাষ্টের মুখোমুখি, অসংখ্য মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাবরণ করার পরও এদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে প্রেরণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার অপরিসীম সাহস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপোষহীন নেতৃত্ব পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বক্তব্যে বাঙালিদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মরণপন সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল।

 

এর আগের দিন ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে পাক-হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।

 

জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী গৌরবোজ্জ্বল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বাংলার জনগণ অর্জন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির ২৩ বছরের রক্তঝরা সংগ্রাম শেষে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে সারা বাংলার জনগণকে অপরিসীম ত্যাগের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

 

২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানা সহ সারাদেশে অপারেশন সার্চলাইট নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।সেদিন  পুলিশ বাহিনী থ্রীনট থ্রী রাইফেল দিয়ে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ আরম্ভ  করেন। এরপর এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতিকে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল সংগ্রামীকে আজ এই দিনে জানাই আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে, ফেনী পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে, ফেনীর সকল পুলিশ সদস্যের পক্ষ থেকে স্বশ্রদ্ধ সালাম ও রক্তিম অভিনন্দন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *