ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায় ৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার প্রধান আসামি মাহতাব উদ্দীন মিনহাজ চৌধুরী ওরফে মিনার, যুবলীগ নেতা মিস্টার, টুপি বেলাল সহ ১৬ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে। আলোচিত এই মামলার রায় বেলা ৩টার দিকে ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আমিনুল হক।
খালাসপ্রাপ্ত হলেন, মিনার চৌধুরী, জিয়াউল অালম মিস্টার, টুপি বেলাল, রিপন, ইকবাল, সাইদুল করিম, অাবদুর রহমান, পিয়াশ,কালামিয়া, ইউনুস, অালমগীর, কাদের,মাসুদ, ফারুক, সাখাওয়াত ও জাহিদ।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত যারা, জাহাঙ্গীর কবীর আদেল, জাহিদ হোসেন চৌধুরী, আবিদুল ইসলাম আবিদ, এমরান হোসেন রাসেল, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আজমীর হোসেন রায়হান, মো. শাহাজালাল উদ্দিন শিপন, কাজী শাহনান মাহমুদ, নুর উদ্দিন মিয়া, আবদুল কাইয়ুম, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, জাহিদুল ইসলাম সৈকত, মো. আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, আবু বক্কর ছিদ্দিক, আরমান হোসেন কাউসার, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জাহিদুল ইসলাম, ফেরদৌস মাহমুদ খান হীরা, সজিব, পাংকু আরিফ, ইসমাইল হোসেন চুট্টু, জসিম উদ্দিন নয়ন, মামুন, মো. সোহান চৌধুরী, মানিক, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, টিটু, নিজাম উদ্দিন আবু, রাহাত মো. এরফান, টিপু, নাতি আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, রুবেল, বাবলু, শফিকুর রহমান ময়না, একরাম হোসেন, মহিউদ্দিন আনিস, মোসলে উদ্দিন আসিফ।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক সকল আসামির জামিন বাতিল করে রায় ঘোষণার জন্য এ তারিখ ধার্য করেন। এ মামলায় ৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫০ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ৫৬ জন আসামির মধ্যে ১৬ জন বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
তাদের মধ্যে হেলাল উদ্দিন নামের একজন পরে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ ছাড়া মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরাও চেয়ারম্যান একরামুল হকের গাড়ির গতিরোধ, গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ৫৬ আসামির মধ্যে ১৪ জন কারাগারে ও ২৪ জন জামিনে ছিলেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি আদালত সকল আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। মামলার শুরু থেকে ১০ জন পলাতক রয়েছেন এবং জামিনে গিয়ে আরো ৭ জন পলাতক হয়েছেন।
এছাড়া, জামিনে থাকা মো. সোহেল ওরফে রুটি সোহেল নামের একজন আসামি ইতোমধ্যে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।
রায় দেওয়ার সময় অাদালতে বাদী ও একরাম পরিবারের কেউ অাসেনি। গণমাধ্যমকে কোন সাক্ষাত দিতেও রাজি নন তারা।
তবে রায় ঘোষনার পর সকল শ্রেনি পেশার লোকদের মুখে সন্তুষ্টির কথা শুনা গেলেও, কয়েকজন অাসামীর পরিবারের অাহাজারি দেখা গেছে।
অাদালত বলেছে, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে অাসামীদের সাথে ভিকটিমের দ্বন্ধের সুত্রপাত হয়। রাজনৈতিক এ দ্বন্দের কারনে স্বদলীয়রা পরিকল্পিত একরামকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২০ মে সকাল ১১টায় ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হককে গাড়ির গতিরোধ করে কুপিয়ে, গুলি করে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করেন আসামিরা।
এ ঘটনায় চেয়ারম্যান একরামুল হকের ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন ওরফে মিনার চৌধুরীসহ অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে ফেনী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
আসামিদের মধ্যে একমাত্র বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরী ছাড়া অন্যরা সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী।