দিনাজপুরে পীর বক্স কবিরাজ ওয়াকফ এস্টেট হরিলুট : উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা

মোঃ আফজাল হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরে পীর বক্স কবিরাজ ওয়াকফ এস্টেট, জমির পরিমাণ ১০৯ বিঘা। মোতওয়ালী হিসেবে আব্দুল লতিফ দায়িত্ব নেওয়ার পর হরিলুট কারবার শুরু করেছে।
জানা গেছে, দিনাজপুর সদর থানার ৮ ও ১০ নং ইউনিয়নের ভিতরে রয়েছে পীর বক্স কবিরাজ ওয়াকফ এস্টেট। জমির পরিমাণ ১০৯ বিঘা। ইসি নং-১০০৯৮। উক্ত এস্টেটটি ৮নং শংকরপুর ইউনিয়নের দামোদরপুর কিসমত শালকী, যুক্তিপাড়া, শালকী এবং ১০ নং কমলপুর ইউ’পির বড়গ্রাম ও পাতলশা মৌজায় ১০৯ বিঘা সম্পত্তির ভিতরে রয়েছে মসজিদ, মক্তব, একটি পুকুরসহ আবাদি জমি। পীর বক্স কবিরাজ ওয়াকফ এস্টেটের দলিলের মূল শর্ত ছিল এস্টেটের আয়ের তিন ভাগের এক ভাগ মসজিদ, মক্তব পরিচালনাসহ গরিব ও মিসকিনদের সাহায্য করবে। বাকি দুই ভাগের এক ভাগ মোতওয়ালীর পরিবার ভোগ করবে। আরেকভাগের অর্থ দিয়ে খাজনা পরিশোধসহ এস্টেটের উন্নয়ন খাতে ব্যয় হবে। এস্টেটের আয়ের অবশিষ্ট টাকা ব্যাংকে জমা থাকবে। কিন্তু আব্দুল লতিফ মোতওয়ালী হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর পীর বক্স কবিরাজ ওয়াকফ এস্টেটের দলিলের শর্ত ভঙ্গ করে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন লোকজনের কাছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এস্টেটের নানা মৌজার সম্পত্তি হস্তান্তর করে।
ইতিমধ্যে মোতওয়ালী আব্দুল লতিফ দামোদরপুর, কিসমত শালকী, যুক্তিপাড়া, শালকী ও বড়গ্রাম মৌজায় প্রায় অর্ধশত লোকজনদের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পজিশন হস্তান্তর দলিল করে দেয়। ফলে ঐসব লোকজন সেমিপাকা দালানবাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছে। এখনও আব্দুল লতিফ অর্থের বিনিময়ে পজিশন হস্তান্তর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এলাকার লোকজন জানায় পীর বক্স কবিরাজ ওয়াকফ এসেস্টের দলিলের শর্ত ভঙ্গ করে টিনের চালা বিক্রি করে মক্তবটি গুড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদের করুন অবস্থা। ল্যাট্টিন ও প্রসাবখানা নেই। মসজিদের বারান্দা থেকেও নেই। মেঝের প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। প্রায় ১০ বৎসর যাবৎ মসজিদ সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পীরবক্স কবিরাজ ওয়াকফ এস্টেট রক্ষার জন্য এলাকার অধিবাসীরা মোতওয়ালী আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে ওয়াকফ প্রশাসক, ঢাকায় লিখিতভাবে আবেদন করেন। ওয়াকফ্ প্রশাসক ঐ আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে পত্র প্রেরণ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোতওয়াল¬ী আব্দুল লতিফ এর বিরুদ্ধে ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন লোকজনদের কাছে হস্তান্তর করার বিষয়ে সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
আমাদের প্রতিনিধির কাছে দুঃখ প্রকাশ করে অত্র এলাকার আকবরসহ অনেকে জানান, মোতওয়াল¬ী আব্দুল লতিফ শালকী ও যুক্তিপাড়ায় বাসাবাড়ী করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রায় ০৩ বিঘা জমি পজিশন হস্তান্তর করেছে। মোতওয়ালীর কাছে পজিশন নিয়ে শিরা, অসকর, অহিদুল, শাহজাহান, মোকসেদুল, মোরশেদসহ অনেকে পাকা বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছে। এছাড়াও যুক্তিপাড়া মৌজায় মুর্শিদুলাহ চৌধুরী প্রায় ৪ একর ও সুখিমন ৩ বিঘা এরা নিজের নামে বি. এস রেকর্ড করলেও মোতওয়ালী আব্দুল লতিফ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। আরও জানায়, পীরবক্স এস্টেটের আব্দুল লতিফের বাবা মৃত ওসমান গণি মোতওয়ালী হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর খেয়াল খুশিমতভাবে পরিচালনা করার কারণে এস্টেটের খাজনা পরিশোধ না করার দায়ে অনেক জমি নিলাম হওয়ার পর্যায়ে পড়ে। এমতাবস্থায় এস্টেটটিকে রক্ষা করার জন্য ঐ সময় মোতওয়াল¬ীর পদ থেকে ওসমান গণিকে অপসারণ করে দিনাজপুর ওয়াকফ্ পরিদর্শক মোঃ মাহবুবুর রহমান অফিসিয়াল মোতওয়াল¬ী হিসেবে দায়িত্ব নেয়। এরপর জমির ফসল থেকে খাজনা পরিশোধ করার পর এস্টেটটি আবারও ওসমান গণির কাছে মোতওয়ালীর পদটি ফিরিয়ে দেয়। বর্তমানে আব্দুল লতিফ এস্টেটের সম্পত্তি লোকজনদের নিকট টাকা পয়সা নিয়ে হস্তান্তর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অত্রাঞ্চলের সুশিল সমাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *