ভুয়া এএসপির কোটি টাকার আলিশান বাড়ি

 

ডেস্ক রিপোর্ট :

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।

ঢাকার সিটি এসবির সিনিয়র এএসপি পরিচয়দানকারী চাঁদপুরের ইয়াসিন ফরহাদ শুধুমাত্র রাজধানীতেই প্রতারণা করেননি। নিজ এলাকার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নাম করে বহু মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

তবে এ চক্রের সঙ্গে স্থানীয় দালালচক্র জড়িত থাকায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। প্রতারণার টাকায় নির্মাণ করছেন আলিশান পাঁচতলা ভবন।

জানা গেছে, ইয়াছিন ফরহাদ এটি তার ভুয়া নাম। এ ধরনের আরও নাম ব্যবহার করে তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। মূলত সে চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের রালদিয়া গ্রামের মোল্লা বাড়ির মোখলেছুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে রাসেল মোল্লা। এলাকায় বিসিএস ক্যাডার বলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। তার বাবাও একই কথা জানালেন।

বুধবার রাসেল মোল্লার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির উত্তর ভিটায় পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের নির্মাণাধীন দ্বিতল ভবন। বর্তমান নির্মাণ পর্যন্ত যার আনুমানিক খরচ প্রায় কোটি টাকা। বাড়িতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগসহ সব সুবিধা রয়েছে। তবে বাড়ি যাওয়ার সড়কটি খুবই সরু।

রাসেলের বাবা মোখলেছুর রহমান জানান, তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। রাসেলই বড়। সে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে দুই-তিন দিন থাকে। বেশির ভাগ সময়েই থাকেন ঢাকায়।

পরিবারের লোকজনকে না জানিয়ে কয়েক বছর আগে চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যানঘাট এলাকায় স্থানীয় রশিদ মাঝির মেয়েকে বিয়ে করে। কিন্তু তার প্রতারণার কথা জানতে পেরে তার স্ত্রী ডিভোর্স দেয়। এ ঘটনায়ও ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

মোখলেছুর রহমান জানান, রাসেল রমনা থানায় আটকের পর তিনিসহ কয়েকজন সাক্ষাৎ করতে গিয়েও সম্ভব হয়নি। তবে রাসেল এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজে জড়িত আছে বলে তিনি জানতেন না।

আলিশান বাড়ি তৈরির কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, বাড়ি তৈরিতে আমারও টাকা আছে। আমি দোকান ও জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। কিন্তু কোটি টাকা খরচের উৎস সম্পর্কে তিনি সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।

স্থানীয় হোসেনপুর গ্রামের দোয়া বাড়ির বাসিন্দা দিপক মজুমদার জানান, রাসেল কয়েক বছর এলাকার মানুষকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ ও খুঁটি এনে দেবেন বলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তার কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা নিলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাননি। হোসেনপুর গ্রামের হাজী বাড়ির বহু পরিবার থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিয়েছে। কিন্তু দালালদের ভয়ে কেউ বলতে চায় না।

দক্ষিণ রালদিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী শাহ্ আলম খান জানান, রাসেল একেক জায়গায় একেক পরিচয় দেয়। আমাদের পরিবারের কাছ থেকে পাঁচটি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে বলে ১ লাখ টাকা দাবি করে। তাকে সন্দেহ হলে আমরা টাকা দেইনি।

চাঁদপুর মডেল থানায় রাসেলের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান মোল্লা জানান, এ ধরনের একটি মামলা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জানুয়ারি বিকালে সিনিয়র পুলিশ সুপারের পোশাক পরে রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে এসে উল্টাপাল্টা কথা বলেন ইয়াছিন ফরহাদ। এতে সন্দেহ হলে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সাইফুল হাসান আজাদ রমনা থানা পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ইয়াসির তাদের পুলিশের পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ইয়াসিন নিজেকে ভুয়া পুলিশ বলে স্বীকার করে।

রমনা থানার এসআই মো. মিজানুর রহমান মামলাটি তদন্ত করছেন। এ পর্যন্ত আদালত দুই দফা রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *