মোঃ আফজাল হোসেন , দিনাজপুর প্রতিনিধি:
“মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও তাদের সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের কোটা ভোগ করছে, আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা রিক্সা চালাচ্ছে কষ্ট করে জীবনযাপন করছে। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যেটুকু করেছেন বিগত কোন সরকারই তা করনেনি। যখন দেখি ভূয়া সনদ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভাতা ও কোটা সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে তখন আমার আক্ষেপ হয়। কাকে বলবো এই কথা আর কে শুনবে আমার কথা? অবিলম্বে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক। সরকারের কাছে এটাই আমার চাওয়া”।
কথাগুলো আক্ষেপের সাথে বলেন, ১৯৭১’র রানাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আসাদুজ্জামান বাচ্চু। তিনি এলাকায় বাসু নামে পরিচিত। তার স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে যে টুকু জানলাম যে, বাসু দা ভালো নেই। বাঁশ চাটাই দিয়ে তৈরী ঘরে তিনি কোন রকমেই বসবাস করেন। মাথার উপর টিনের ছাউনি, চাটাইয়ের ফুটা দিয়ে দিনের আলো ও রাতে চাঁদের জ্যোৎøা সবকিছুই দেখায় যায়। বাড়ী ঘর দেখে মনে হয়। কাঠ, বাঁশ আর চাটাইয়ের স্তুপ। একটু বৃষ্টিতে বাড়ীর উঠানে হাটু পানি জমে। দিনাজপুরের প্রচুন্ড শীতে তার পরিবারের সদস্যরা কাঁথা ও রিলিফের কম্বল গায়ে দিয়ে রাত্রী কাটায় কোন দিন না খেয়েও দিন কাটাতে হয়। এই মহান মুক্তিযোদ্ধার বাড়ী দিনাজপুর শহরের রামনগর ফটবল মাঠ সংলগ্ন। তিনি শহরের গুঞ্জাবাড়ী নিবাসী মানুমা বেগমকে স্বাধীনতার ২ বছর পর বিয়ে তার দুই পুত্র ও এক কন্যা। বড় পুত্র গাড়ী চালক ও অন্য পুত্র বেকার। অর্থের অভাবে কোন দিন ছেলে মেয়েদের ভালো স্কুলে পড়াতে পারেননি। আর্থিক সঙ্গতির কারনে ছেলে মেয়েরা বেশি দুর লেখা পড়া করতে পারেনি। এখন সে বীর মুক্তিযোদ্ধা বয়সের ভাড়ে দুর্বল হয়ে পরেছে। নানা রকম জটিল রোগ তাকে আক্রমন করলেও তিনি ভালো ডাক্তার দেখাতে পারেন না। তার নিজেস্ব ৪ শতক জমি থাকলেও টাকার অভাবে বাড়ী তৈরী করতে এখনও পারেননি। কষ্টের কথা বলতে বলতে তার চোখের কোনে পানি জমে আসে। বাসু দা শুধু মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি নিয়ে বেচে আছেন। তাকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে টুকু সন্মানী ভাতা দেয় তা নিয়ে কোন রকমে পরিবার পরিজন নিয়ে বেচে আছেন।
বাসু ভারতের শিলিগুড়ি জেলার পানিঘাটায় ক্যাপ্টেন এস মুখার্জির অধিনে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন এবং বাসু ভারতের ইসলামপুর’র পূর্বে থোকড়াবাড়ী বিওপি ক্যাম্প (ফরওর্য়াড) ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন এলাকায় সন্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। তার সাথে প্রশিক্ষন রত ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র শফিকুল হক ছুটুর ভাই সিদ্দিকুল হক বাচ্চু, মর্ডাণ মোড়ের বিশিষ্ট মটর সাইকেল ব্যবসায়ী মোঃ তসলিম, শুকুর চৌধুরী, সাব্বির আহম্মেদ ও সিয়াব উদ্দিন। তার এফ এফ নাম্বার ২০৪৪ মুক্তি বার্তা নং ……১০৪২৪, গ্যাজেট নাম্বার ৭৬ তিনি একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি তার পিতার নাম ডাঃ ললিত চন্দ্র রায়। তিনি ধর্মান্তিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তখন তার নাম রাখেন মোঃ আসাদুজ্জামান বাচ্চু ওরফে বাসু। তিনি অনেক সন্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে শত্রু পক্ষের আস্থানা তছনছ করে দিয়ে দিয়েছেন। বারে বারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করেছেন। সরকার এখনো দেশ ও জাতীয় প্রয়োজনে তাকে যদি ডাকেন তবে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করবেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ বিদ্যায় সব রকম সাধ্যমত আমি সহযোগী করতে সক্ষম। মানুষিকতা আতœ বিশ্বাস এবং দৈহিক ক্ষমতা এখনো তার রয়েছে। মোঃ আসাদুজ্জামান বাচ্চু (বাসু) তাই বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট মাথা গোঁজার ঠাই বাড়ী বানানোর জন্য সহযোগীতা কামনা করেছেন। যেন তার সন্তানদের মৃত্যু কালে থাকার জন্য একটা উপযুক্ত ঠাই দিয়ে যেতে পারেন।