৫ জানুয়ারি গনতন্ত্রের বিজয় দিবস – বাংলারদর্পন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : ০৫ জানুয়ারি ২০১৮। 

চার বছর আগে আজকের এই দিনে তৃতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে না এসে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্ট করেছিল আগের সংসদের বিরোধী দল বিএনপি। তবে এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন শুরু করে তারা। এর ফলে আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে অবশেষে ক্ষান্তি দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনে পর কদিন টিকতে পারে বিএনপির এমন চ্যালেঞ্জের পরও আজ মেয়াদের চতুর্থ ও শেষ বছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। এ বছর সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হতে চলেছে।

বছর ঘুরে আবার আজ ৫ জানুয়ারি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোচিত একটি দিন। ২০১৪ সালের এই দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও এর পরবর্তী বিভিন্ন রাজনৈতিক পট পরিবর্তন বাংলাদেশের রাজনীতিকে আজকের সুস্থির অবস্থানে এনেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বছরে এসে, নতুন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ফিরে দেখা দেশ ও জনগণ কী পেল?

২০১৪ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করে পরবর্তী জ্বালাও পোঁড়াও আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সরকারের বর্ষপূর্তিতে এই আন্দোলনের মাত্রা বাড়ে। তবে এমন আন্দোলনে সরকার ফেলে দেওয়ার ধারে কাছে যাওয়া দূরে থাক, উল্টো জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিএনপি। ২০১৫ সালের এপ্রিলের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই বিএনপি আন্দোলনের মৃত্যু হয়। সরকার হটাতে না পেরে বরং নিজেদের জনবিচ্ছিন্ন করে গ্রহণযোগ্যতা হারায় বিএনপি।

২০১৪-২০১৫ সালে নিজেদের তৃতীয় মেয়াদের আওয়ামী লীগের প্রথম দুই বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিষয় প্রমাণিত হয়ে যায়, এখন আর হরতালের নামে জ্বালাও পোড়াও সহিংসতা করে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপি আন্দোলন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেলে এক অর্থে জনগণ হাফ ছেড়ে বাঁচে। আর জনবিচ্ছিন্ন হওয়া ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর বিষয়টি বিএনপি হাড়ে হাড়ে টের পায় পরবর্তী বছরগুলোতে।

২০১৬-২০১৭ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে শন্তিপূর্ণ সময় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই সময়ে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিতর্কের প্লাটফর্ম পরিবর্তন হয়েছে। এখন রাজনীতি হয় মেধা দিয়ে। রাজনীতির ক্ষেত্র এখন আলোচনার টেবিল, ড্রাইং রুম। এমন রাজনৈতিক পরিবেশের আকাঙ্ক্ষাই তো ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের।

এবারের ৫ জানুয়ারির মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় একটানা ৯ বছরে কাটাল আওয়ামী লীগ। এই টানা ক্ষমতায় থাকার কয়েকটি ফল বাংলাদেশ হাতেনাতেই পেয়েছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমানবিক প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্পসহ অনেকগুলো মেগা প্রজেক্টের কাজ চলছে, কোনো কোনো প্রজেক্ট বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। এই মেগাপ্রজেক্টগুলোর বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি বিষয় আরও প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য পাঁচ বছর স্বল্প সময়। দীর্ঘ সময় সরকারের থাকলে উন্নয়নের ধারাবাহিক গতিশীলতা বজায় থাকে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে গণতন্ত্রের অন্যতম অঙ্গ সংসদ সবচেয়ে কার্যকর ভাবে চলছে। গত ৪ বছরের সংসদ সবচেয়ে গঠনমূলক কার্যক্রম হয়েছে। আগের সংসদগুলোতে দেখা যায় হইচই, ওয়াকআউট সহ নানা গোলমাল। অথচ গত চার বছরে সংসদে এমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আলোচনা হয়েছে, সমালোচনা হয়েছে তবে সবই ঘটেছে গঠনমূলক ভাবে। সংসদে ছিল একটি কার্যকর বিরোধী দল।

আবার ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের ফলে কিছু নেতিবাচক বিষয়ও দেখা গেছে দেশের রাজনীতিতে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার অনেক এমপি-মন্ত্রীর মধ্যে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা এবং নিজের দায়িত্ব বোধের অভাব দেখা যায়। এমপি মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ টানা দুই মেয়াদ পেয়েছেন, এদের কারও কারও মধ্যে দাম্ভিকতা ও অহংকারও চোখে পড়ে। স্থানীয় নেতাকর্মী ও এলাকার জনগণ থেকে তাঁরা একরকম দূরত্ব রেখে চলেন। আবার ক্ষেত্র বিশেষে তাঁদের কর্মকাণ্ডে এমন দম্ভের প্রকাশ দেখা যায়।

আবার ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জনগণের ভোটের ক্ষমতাও নষ্ট হয়েছে হয়েছে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মতে, নির্বাচন একতরফা হওয়া এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচনে জয়লাভে জনগণের ভোটের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে।

আবার ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরই বাংলাদেশের সরকার হয়ে গেছে একজন কেন্দ্রিক- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দল, সরকার, রাজনীতির সব সিদ্ধান্তই এখন এককভাবে নিতে হয় শেখ হাসিনাকে। এভাবে চলা ঠিক নয়, আর এটি সরকারের কর্মকাণ্ড চলায় হঠাৎ কোনো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

যত বিতর্কই থাক ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতিকে আজ ভিন্ন একটি স্থানে নিয়ে এসেছে। এখন বাংলাদেশের রাজনীতি গঠনমূলক। এখন রাজনৈতিক কর্মসূচি মানেই জ্বালাও পোড়াও নয়। আর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেউ করলে মোটেই সে জনগণের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা পাবে না। বাংলাদেশের মানুষ এখন রাজনীতি সচেতন হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে যে বোধের সৃষ্টি হয়েছে তার প্রকাশ দেখা যেতে পারে এই বছরের শেষেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *