চিকিৎসকদের স্বার্থপরতা মেনে নেয়া যায় না – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 

বাংলারদর্পন :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে সাতটি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের উদ্দেশে যেসব কথা বলেছেন, তা স্বাস্থ্য খাতে তার আন্তরিকতারই বহিঃপ্রকাশ বলতে হবে। তিনি বলেছেন, উপজেলা পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মানসিকতা না থাকলে সেখানে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি ছেড়ে দেয়াই উচিত। তিনি আরও বলেছেন, রাজধানীতে বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমে বেশি টাকা উপার্জন করতে পারা যায়- এ ধরনের মানসিকতা থাকলে সেই চিকিৎসকের চাকরি করার প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী মেডিকেল কলেজগুলোয় শিক্ষার মান বাড়ানোর ওপরও জোর দিয়েছেন। আরও বলেছেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতলাগুলোয় কী ধরনের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা তদারক করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কণ্ঠেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপরের কথাগুলো দেশের চিকিৎসা খাতের বাস্তব পরিস্থিতিরই প্রতিচিত্র বলতে হবে। উপজেলাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানকার জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই আন্তরিক নন। তারা রাজধানীতে এসে বদলির তদবিরে ব্যস্ত থাকেন অথবা অনেকে রাজধানীতে বসবাসরত তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দিন কাটান। এটা ঠিক, উপজেলাগুলোয় নাগরিক সুবিধা, বিশেষত সন্তানের উন্নত লেখাপড়ার সুযোগ রাজধানীর তুলনায় কম। কিন্তু চাকরি বলে কথা। চাকরিবিধিতে রয়েছে- নিয়োগপ্রাপ্তরা দেশের যে কোনো জায়গায় দায়িত্ব পালনে বাধ্য, বদলির আদেশ পালন করাও তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। সরকারি চাকরির এই বিধিমালা চিকিৎসকরা মানতে চাইছেন না। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শতাধিক চিকিৎসককে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বদলি করার আদেশ জারি হলেও তারা নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে চাচ্ছেন না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ মনোভাব তাদের চরম স্বার্থপরতারই বহিঃপ্রকাশ। তারা চিকিৎসক হয়েছেন মূলত সরকারি খরচে, সেই অর্থের জোগান দিয়েছেন আবার সাধারণ মানুষ। সুতরাং জনগণকে সেবা দেয়ার বিষয়টি তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা উচিত। অথচ তারা ব্যস্ত নিজেদের ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ে। তবে এটা সুখবরই বলতে হবে, এবার বদলিকৃত চিকিৎসকদের কোনো তদবিরই আমলে নিচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাদের সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করলে তারা চাকরি বাঁচাতে পারবেন না।

দেশের চিকিৎসা খাত নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের অভিযোগ শোনা যায়। চিকিৎসায় অবহেলা সেগুলোর একটি। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা না দেয়ার মানসিকতা নিঃসন্দেহে রোগীর প্রতি অবহেলারই নামান্তর। চিকিৎসকরা কেন জেলা-উপজেলায় থাকতে অথবা যেতে চান না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। বর্তমান যুগ কানেক্টিভিটির যুগ। প্রযুক্তির সুবিধা এখন গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। আমরা মনে করি, মাত্রাতিরিক্ত অর্থের মোহ কিংবা রাজধানীর কথিত উন্নত জীবনের প্রতি টানের চেয়ে মানবসেবার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উচিত হবে গ্রামের সাধারণ মানুষের সেবার বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *