হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অতি পরিচিত চড়ুই পাখি – বাংলারদর্পন 

 

মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, ঝিনাইদহ

যেকোনো লোকালয়ের আশেপাশে চড়ুই একটি সুপরিচিত পাখি। এরা জনবসতির মধ্যে থাকতে ভালোবাসে তাই এদের ইংরাজি নাম ‘হাউস স্প্যারো’ অর্থাৎ ‘গৃহস্থালির চড়ুই’। পৃথিবীতে মোট ৪৮ প্রজাতির চড়ু–ই দেখতে পাওয়া যায়। জীববিজ্ঞান অনুযায়ী এদের পরিবার ১১টি গণে বিভক্ত। ‘গৃহস্থালির চড়–ই’ এদের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত। এদের আদিনিবাস ছিল মূলত ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ।

চড়ুই একটি চঞ্চল প্রকৃতির পাখি। এরা মানুষের আশপাশে বসবাস করতে ভালোবাসে। প্রায় ১০ হাজার বছর আগে চড়ুই মানুষের সান্নিধ্যে আসে। আমাদের ঘরবাড়ি, আশপাশের ভাঙা দালান এবং বড় ও বুড়ো গাছের গর্তে এরা বাসা বাঁধে। চড়ুই বছরে একাধিকবার প্রজনন করে। প্রতিবারে ৪ থেকে ৬টি করে ডিম দেয়। এদের ছানা বেঁচে থাকে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ।

গত কয়েক দশক থেকে চড়ুইয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৮০ সাল নাগাদ পৃথিবীর বৃহদাংশজুড়ে হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ। চড়ুইয়ের সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ হল- নিয়ন্ত্রণহীন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার। ক্ষতিকর পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষক যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহার করে। আর চড়ুই প্রধানত শস্যদানা, ঘাসের বিচির পাশাপাশি অসংখ্য পোকামাকড় খেয়ে থাকে। কিন্তু ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর কারণে এসব খাবার খেয়ে তারা আজ বিলুপ্তির পথে । গবেষকদের মতে, গ্রামের দিকে চড়ুইয়ের দেখা মিললেও শহরাঞ্চলে সে দৃশ্য প্রায় বিরল। এর জন্য প্রকৃতভাবেই দায়ী ক্রম বর্ধমান মোবাইল টাওয়ার। টাওয়ার থেকে নির্গত ক্রমাগত বিকিরণের জেরেই দ্রæত হারে কমে যাচেছ এই পাখিটি।চড়ুইয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল- পাখি শিকার। কয়েক দশক আগেও গ্রামে-গঞ্জে বাড়ির উঠান, ঘরের কোণে, বারান্দায় চড়ুইয়ের উপস্থিতি ছিল খুবই স্বাভাবিক। চড়ুইয়ের ডাকে শুরু হতো সকাল। আর সন্ধ্যায় চড়ুইয়ের ডাকে আমরা বুঝতাম মাঠ থেকে বাড়ি ফিরতে হবে। ঘরের ভেন্টিলেটারে চড়ুই দম্পতির সংসারটায় সদ্য জন্ম নেয়া চড়ুই আমাদের পরিবারের অংশই ছিল।

প্রকৃতিতে চড়ুইয়ের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আমাদের অসচেতনতার কারণে আমরা সেটা বুঝতে পারি না। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রকৃতি থেকে আর কোনো চড়ুইয়ের বিলুপ্তি নয়। আমাদের বাসাবাড়ির বারান্দায় যদি চড়ুইয়ের বাস উপযোগী করে দু’একটি ছোট বাক্স বেঁধে রাখি। এতে বিলুপ্তির হাত থেকে যেমন চড়ুই বাঁচবে, তেমনি বাড়ির শিশুরাও পাবে আনন্দ।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *