ঢাকা: আজিমপুরে কনকর্ড লিমিটেডের নির্মিত ১৮ তলা ভবন আগামী এক মাসের মধ্যে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, সমাজকল্যাণ সচিবের মাধ্যমে এই ভবন বুঝিয়ে দিতে হবে। যদি এই সময়ের মধ্যে কনকর্ড ভবন হস্তান্তর না করে তাহলে বিবাদীদেরকে তা বুঝে নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এতিমখানার দুই বিঘা জমি কনকর্ডের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসককেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে। প্রকাশিত রায়টি ১০৭ পৃষ্ঠার। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
রায়ে মুসলিম এতিমখানা পরিচালনার জন্য সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। যাতে এতিমখানার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়। এতিমখানার সম্পত্তি যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্যও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া এতিমখানার সম্পত্তি কনকর্ড লিমিটেডকে হস্তান্তর এবং এ সংক্রান্ত আম মোক্তারনামা দলিল অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত রায়ে বলেছে, এতিমখানার সম্পত্তি যথাযথভাবে সংরক্ষণের দায়িত্ব যাদের উপর ছিল তারা এক্ষেত্রে একেবারেই নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এই নিষ্ক্রিয়তাকে বেআইনি ঘোষণা করা হলো।
রায়ে বলা হয়েছে, সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জমি সরকারের নিকট থেকে লিজপ্রাপ্ত। এতিমখানা সম্প্রসারণের জন্য সরকার বিনামূল্যে এই জমি হস্তান্তর করে। তবে ওই লিজের শর্ত ছিল এতিমখানার প্রয়োজন ব্যতীত অন্য প্রয়োজনে জমি ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাত্ এতিমদের দেখাশোনা ও তাদের স্বার্থ সবার আগে দেখতে হবে। কিন্তু এতিমদের স্বার্থ না দেখে তত্কালীন কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি বেআইনিভাবে দুই বিঘা জমি কনকর্ডের কাছে হস্তান্তর করে। আর এই জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নেওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু এতিমখানা পরিচালনাকারী তত্কালীন কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজনবোধ করেননি। এছাড়া কমিটির সাধারণ সভার দুই-তৃতীয়াংশের অনুমতি নেওয়ারও দরকার ছিল। কিন্তু তারা এটি না করেই কনকর্ডকে জমি হস্তান্তরে এক ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
রায় প্রকাশের পর মনজিল মোরসেদ ‘ইত্তেফাক’কে বলেন, লিজের শর্ত এবং এতিমখানার গঠনতন্ত্রের বিধান ভঙ্গ করে ওই সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছিল। হাইকোর্ট সম্পত্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে বেআইনি ঘোষণা করে রায় দিয়েছে। এই রায়ের ফলে কনকর্ডকে এক মাসের মধ্যে এতিমখানার কাছে ভবন বুঝিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় এ ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও বিশেষ কারণে তারা নিশ্চুপ ছিল, যে কারণে আমাদেরকে আদালতের আশ্রয় নিতে হয়েছে।
১৯০৯ সালে ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ নিজ নামে এতিমখানা স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে সরকারের নিকট হতে জমি লিজ নিয়ে এতিমখানা সম্প্রসারণ করে পরিচালনা করা হচ্ছিল। ২০০৩ সালের ২২ জুলাই এতিমখানার তত্কালীন সভাপতি বেগম শামসুন্নাহার আহসানউল্লাহ এবং সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জিএ খান এতিমখানার দুই বিঘা জমি ডেভলপার কোম্পানি কনকর্ডকে হস্তান্তর করেন। তখন ‘দৈনিক ইত্তেফাক’সহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন প্রকাশের ভিত্তিতে এতিমখানার চারজন ছাত্রের পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন হিউম্যান রাইট্স্ এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করে। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট কনকর্ডের কাছে জমি হস্তান্তরের চুক্তিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়