৭মার্চের ভাষণে আমাদের শোষণ, বঞ্চনার ইতিহাস বলেছেন জাতির পিতা

 

বাংলারদর্পন  >>>>

৭ মার্চ: স্বীকৃতির উদযাপনে সোহরাওয়ার্দীতেই সমাবেশ একইসঙ্গে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী এবং খুনি ও ইতিহাস বিকৃতকারীরা যেন ক্ষমতায় যেতে না পারে সে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

 

একাত্তরের ৭ মার্চ যে উদ্যানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় শনিবার সেই জায়গাতেই এক সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে সেই ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আজকে বারবার আমার সেই কথাই মনে হয় যে, যারা এই ভাষণ একদিন নিষিদ্ধ করেছিল তাদের অবস্থাটা কি? তারা কোথায় মুখ লুকাবে? তারা এই মহাসত্যকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।

 

“আমাদের দুর্ভাগ্য। একাত্তরে আমরা যারা এই ভাষণ শুনতে পেয়েছিলাম তারা সৌভাগ্যবান। পঁচাত্তরের পর থেকে যারা ইতিহাস বিকৃতি দেখেছে, সত্যি তাদের জন্য দুঃখ হয় যে, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয়ী জাতি, বিজয় অর্জন করেছি, কিন্তু সেই ইতিহাস আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানতে পারে নাই।”

 

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, তা সম্প্রতি ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত হয়েছে।

 

এই স্বীকৃতি উদযাপনে শনিবার সরকারের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলায় শোভাযাত্রা-সমাবেশের কর্মসূচি পালিত হয়।

 

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কথা উল্লেখ করে সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে সন্মান পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কি দুর্ভাগ্য!

 

“পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে শুধু হত্যাই করা হয় নাই, যে আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, যে আদর্শ নিয়ে লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছিল সেই আদর্শ ভূলুণ্ঠিত করে স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আলবদর ওই খুনি তাদেরকেই ক্ষমতায় বসানো হয়। তারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করে।”

তিনি বলেন, “জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ ছিল নিষিদ্ধ। ওই ভাষণের রেকর্ড টেলিভিশনে বাজাতে দেয়নি। সে ভাষণ বাজাতে গেলে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর এসেছে আঘাত। কত মানুষ জীবন দিয়েছে। অথচ এই ঐতিহাসিক ভাষণ আজকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।”

 

ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ জ্যাকব জে ফিল্ডের ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস: দ্য স্পিচেস দ্যাট ইনস্পার্য়াড হিস্ট্রি’ বইতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কথাও তুলে ধরে শেখ হাসিনা।

 

জ্যাকব জে ফিল্ডের বইয়ে ৪১টি বক্তব্যে সিসেরো থেকে চার্চিল, লিঙ্কন থেকে মাও- গত আড়াই হাজার বছরের সবচেয়ে উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী যুদ্ধকালীন বক্তৃতাগুলোর সারসংক্ষেপ রয়েছে।

 

“জাতির পিতার ভাষণ এই বইতে স্থান পায়। আর আমাদের দেশের পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এই ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিলেন সে সময়। ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না।”

 

ইউনেস্কোর স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্থান করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। এর ভেতর দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাঙালি জাতি বিশ্বে সম্মান পেয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

 

সাতই মার্চে ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মীনি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

 

তিনি বলেন, “আমার মা বাবাকে বলেছিলেন, তুমি সারাটা জীবন এদেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছো। তুমি জানো এদেশের মানুষের মুক্তি কিসে। কাজেই কারো কথা শোনার কোনো প্রয়োজন নেই। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সেই কথাই বলবে। সেই বক্তৃতায় দেবে।

“আপনারা দেখেছেন, পৃথিবীর কোনো ভাষণ….বেশিরভাগই লিখিত ভাষণ। কিন্তু এই একটি ভাষণ, জাতির পিতার হাতে কোনো কাগজ ছিল না। কোনো নোট ছিল না। কিছুই ছিল না। এই ভাষণ সবটুকু তিনি তার মন থেকে বলেছিলেন এবং এই ভাষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছিল। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল জাতির পিতার নির্দেশে। অক্ষরে অক্ষরে সব পালন করেছিল।

 

আগামী প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ গৌরবগাঁথা। এ ভাষণ শুধু ভাষণ নয়। এই ভাষণে আমাদের শোষণ, বঞ্চনার ইতিহাস বলেছেন জাতির পিতা। এই ভাষণে তিনি নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এই ভাষণে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কি হবে সেটাও তিনি বলে গেছেন।”

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা।

 

“ওই রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, ইতিহাস বিকৃতকারী তারা যেন এদেশে আর কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে…এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই দেশ ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলব।”

 

জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদযাপন শুরুর পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকালে শুরু হয় এই সমাবেশ। রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সরকারি কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রাসহ সমাবেশে যোগ দেন।

এর আগে দুপুর ১২টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে এই উদযাপন শুরু হয়।

 

পরে সেখান থেকে আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দীতে যান রাজনৈতিক নেতানেত্রী ও সরকারি কর্মকর্তারা।

 

সমাবেশের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।

 

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়। এছাড়াও ছিল কবিতা, গান ও নৃত্য পরিবেশনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *