বাংলারদর্পন ||
হেমন্তের মাঝামাঝিতে ঢাকার বাজারে শীতের সবজি উঠলেও এখনও চড়া দামেই তা কিনতে হচ্ছে।
বন্যা-অতি বৃষ্টিতে ক্ষেত নষ্ট হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি। শীতের সবজি উঠলে দাম কমবে বলে আশা থাকলেও এখনও তার প্রভাব পড়েনি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা জাফর শুক্রবার বলেন, সাধারণত শীত শুরুর আগে শাক-সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকে। এবার শীতের নতুন শাক-সবজি বাজারে আসা শুরু করলেও দাম কমছে খুব ধীরে।
“অন্য বছরের তুলনায় এবার শাক সবজির দাম একটু চড়া। আসলে সব পণ্যের বাজারই এখন চড়া। আপনি পেঁয়াজ, চাল, লবণ তেলের খোঁজ নেন। দেখবেন একই অবস্থা।”
সকাল ১০টার দিকে কারওয়ানবাজারে সাভার থেকে আসা পুঁই শাকের আঁটি ২০ টাকা এবং মুলা শাক আঁটিতে ১২ টাকা করে রাখছিলেন পাইকার আবু হানিফ।
শাকের দাম এতো চড়া কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গতবারের তুলনায় এবার সাভারেই দাম একটু বাড়তি। গতবার নভেম্বরের এই সময়টাতে ৬-৭ টাকায় মুলা শাক ও লাল শাক বিক্রি করেছি। পুঁই শাক বিক্রি করেছি ১২ থেকে ১৪ টাকায়।”
তবে এখন সাভারে কৃষক পর্যায় থেকে কারওয়ানবাজারে দামের ব্যবধান কত, তা বলতে রাজি হননি আবু হানিফ।
হানিফ যেখানে ট্রাক থেকে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে শাক বিক্রি করছিলেন, তার কিছুটা দূরে খুচরা দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়- পুঁই শাকের আঁটি ২৫ টাকা, মুলা ও লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চড়ামূল্যের কাঁচাবাজারে সিম, পটল, মুলা ও ফুল কপির দাম কিছুটা কমেছে বলে কারওয়ানবাজারের আরেক বিক্রেতা শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “গত সপ্তাহে সিমের কেজি ১২০ টাকা ছিল। আজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ফুল কপি ও বাঁধা কপির দাম ১০ টাকা কমে প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়।”
একইভাবে মুলা ৪০ টাকা থেকে কমে ৩০ টাকায়, পটল ৫০ টাকা থেকে কমে ৪০ টাকায় কেজি বিক্রি হয় এদিন।
তবে ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়শ, করলাসহ অন্যান্য সবজি দাম আগের মতোই রয়েছে, ৫০-৬০ টাকার মধ্যে।
বাজারে স্বল্প পরিসরে এসেছে নতুন আলু, তবে দাম অনেক চড়া। পুরোনো আলু ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও নতুন আলু কিনতে লাগছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়।
কারওয়ানবাজারে কয়েকটি সবজির দাম কমলেও ঢাকার বেশিরভাগ কাঁচাবাজারে এর তেমন প্রভাব পড়েনি।
মিরপুর ২ নম্বরের বড়বাগ কাঁচাবাজারে সিম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, ফুল কপি ও বাঁধা কপি ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পেঁপেঁ ৩০ টাকা, ঢেঁড়শ ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
এই বাজারের দোকানি বিপ্লব সরকার বলেন, সিম এতদিন ১২০ টাকা করে বিক্রি করছিলেন তারা। চলতি সপ্তাহে কেজিতে ২০ টাকা কমেছে।
ইস্কাটন থেকে কারওয়ানবাজারে কেনাকাটা করতে আসা সুশান্ত সরকার জানান, সিম, পটলসহ কয়েকটি সবজির দাম কমেছে। তবে মিষ্টি কুমড়ার দাম বেড়ে গেছে, কেজি প্রতি নিচ্ছে ৪০ টাকা।
পেঁয়াজের দাম কমেছে ;
ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার প্রবণতা বাড়তে থাকায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে বলে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।
এদিন কারওয়ানবাজারে ফরিদপুর থেকে আসা পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়, যা আগেরদিনও ছিল ৪০০ টাকার উপরে।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নাফ বলেন, গত বছর পেঁয়াজ তোলার মওসুমের শেষ দিকে পাবনা, কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলায় আকস্মিক শিলা বৃষ্টি হয়েছিল। সে কারণে এবার নতুন পেঁয়াজ উঠার আগে দাম অনেক বেড়ে গেছে।
এ বছর দুই দফায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে খুচরায় কেজি প্রতি ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। প্রথম দফা দাম বাড়ে অগাস্টের প্রথম দিকে, সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে ২৫-২৮ টাকার পেঁয়াজ গিয়ে দাঁড়ায় ৫০ এর কোটায়। এরপর আমদানি বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা তৎপরতায় দাম বৃদ্ধি আটকায়।
কয়েক মাস ৫০ টাকার আশপাশে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হলেও গত মাসের শেষদিকে হঠাৎ চড়তে থাকে দাম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে তা ৯০টাকা পর্যন্ত ওঠে।
ব্যবসায়ী মান্নাফ বলেন, “নতুন পেঁয়াজ আসতে আরও দেড় মাস সময় বাকি। এর মধ্যে পেঁয়াজের বাজারে এমন অস্থিরতা লেগেই থাকবে। তবে ভারতীয় আমদানি বাড়াতে পারলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”